বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘প্রেমিকা’ দিয়ে ডেকে এনে মুক্তিপণ দাবি, না পেয়ে হত্যা

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:২৮

মুক্তিপণের আশায় ববিতাকে দিয়ে ভুক্তভোগী শহিদুলকে আশুলিয়ার নিরিবিলি নামক এলাকায় ডেকে আনেন মো. আলমগীর ও তার সঙ্গীরা। মুক্তিপণ না পেয়ে ভিকটিমকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত অবস্থায় ফেলে যান তারা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদুলের মৃত্যু হয়।

ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে যৌথভাবে একটি সমিতি পরিচালনা করে আসছিলেন। সমিতির আরেক অংশীদার মো. আলমগীর মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ববিতাকে ভাড়া করে শহিদুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করান।

পরে মুক্তিপণের আশায় ববিতাকে দিয়ে শহিদুলকে আশুলিয়ার নিরিবিলি নামক এলাকায় ডেকে আনেন মো. আলমগীর ও তার সঙ্গীরা। মুক্তিপণ না পেয়ে ভিকটিমকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত অবস্থায় ফেলে যান তারা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদুলের মৃত্যু হয়।

রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল মোমেন।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর শহিদুল ইসলাম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী মো. আলমগীরসহ সাতজনকে গত দুই দিনে টাঙ্গাইল, শেরপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত র‍্যাব-১ টাঙ্গাইল, শেরপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. আলমগীর, ববিতা খাতুন ওরফে আকলিমা, সাগর হোসেন বাবু ওরফে কালা বাবু, মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ, আফজাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সাগর ও রাকিব শেখ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা শহিদুল ইসলামকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘ভিকটিম শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া বাইপাইল বুড়ির বাজার এলাকায় যৌথভাবে কর্ণফুলী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লি. পরিচালনা করে আসছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমের সঙ্গে থাকা মোবাইল থেকে তার ব্যবসায়িক পার্টনার মাসুদকে জানান, ভিকটিম অসুস্থ হয়ে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় পড়ে আছে। তখন মাসুদ ওই স্থানে ভিকটিম শহিদুলকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টায় আশুলিয়ায় ডেণ্ডাবর কাঁঠালবাগান ফয়েজের মোড়ে তাকে অসুস্থ অবস্থায় অটোরিকশার মধ্যে দেখতে পান।

মুক্তিপণ না পেয়ে ভিকটিম শহিদুল ইসলামকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত অবস্থায় ফেলে যান মো. আলমগীর ও তার সঙ্গীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদুলের মৃত্যু হয়। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক মাসুদ ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে পলাশবাড়ী হাবিব হাসপাতালে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের অবস্থা গুরুতর দেখে মুজারমিল ল্যাব-১ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ভিকটিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন আনুমানিক রাত ২টায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ভিকটিম শহিদুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই আবুল মনসুর বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। র‍্যাব-১ এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সঙ্গে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

কেন শহিদুল ইসলাম খুন হলেন

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. আলমগীর ভিকটিমের সমিতির পার্টনার। তিনি ভিকটিমকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণের লোভে, অর্থের বিনিময়ে তার পূর্বপরিচিত একটি মেয়েকে (ববিতা) রাজি করান। পরবর্তী সময়ে মেয়েটি অত্যন্ত সুকৌশলে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে ভিকটিমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে।

আলমগীর অল্প সময়ে বেশি টাকা উপার্জনের লোভ দেখিয়ে এক মাস আগে ববিতাকে ভিকটিম শহিদুল ইসলামের মোবাইল নম্বর দেন এবং প্রেমের সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে ববিতাকে দেয়া ঠিকানায় ভিকটিম শহিদুল ইসলামকে নিয়ে আসতে বলেন।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ববিতা ভিকটিম শহিদুল ইসলামকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় ফোনের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে আসে। ববিতা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে নিয়ে ঘটনাস্থল আশুলিয়ার পলাশবাড়ী তালতলা মাঠে পৌঁছানো মাত্রই সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেয়া আফজাল, সাগর হোসেন বাবু, মাসুদ, রাকিব, রফিকুল ইসলামসহ পলাতক আসামি মিলন, পিন্টু ও ধলা বাবু ভিকটিমকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মুক্তিপণের জন্য হাতুড়ি এবং লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।

র‍্যাব জানায়, আসামিরা ভিকটিম শহিদুল ইসলামকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সমিতির পার্টনার দিদারুল ইসলামের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ১ লাখ টাকা বিকাশ করে দেয়ার জন্য বলে। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় আসামিরা পুনরায় হাতুড়ি এবং লাঠি দিয়ে ভিকটিমকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।

ভিকটিম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আফজাল ভিকটিমকে আশুলিয়ার নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমিতির পার্টনার মাসুদকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়। আসামিরা ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় আশুলিয়ার নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি অটোরিকশায় রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর আসামিরা বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে চলে যায় বলে স্বীকার করেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল আব্দুল মোমেন বলেন, ববিতাকে আলমগীর মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে। তাদের ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ ছিল না। মূলত অল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের জন্যই আসামিরা ঘটনাটি ঘটায়।

এ বিভাগের আরো খবর