দুর্নীতি দমনের জন্য গঠিত কমিশনকে (দুদক) পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের যে কর্মকর্তা অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা দেখেছেন তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশনকে পুরোপুরিভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে৷’
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বক্তব্য দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের স্বপ্ন ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য, বায়ান্ন-র ৭০ বছর পরও আমরা একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাঁড় করাতে পারিনি।
‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের যে আলাদা সত্তা, আলাদা পরিচিতি সেটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। দেশকে তারা একটি নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার ব্যবহার আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। এতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ছেলেরা ভিন্ন ভাষায় লেখাপড়া করে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমরা কখনো আশা করিনি।’
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার আসার পর থেকে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, ন্যূনতম কর্মসংস্থানের অধিকার ধ্বংস করে ফেলেছে৷ পুরো দেশকে লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করা হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের মাতা উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, ‘চিকিৎসা করানোর জন্য তার দেশের বাইরে যাওয়া দরকার। বার বার সেই ব্যবস্থা চেয়েও আমরা পাইনি।’
‘তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে প্রায় ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।’
দলের সব নেতা-কর্মীর অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা৷ মাথানত না করা। আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে ভাষা আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা তা সমকালীন বাংলাদেশে আছে কি না? বাস্তবতা হলো, তা নেই।
‘আওয়ামী লীগ দেশে যা চর্চা করছে তা গণতন্ত্র নয়, ফ্যাসিজম। আওয়ামী লীগের ইতিহাস, তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। অপরপক্ষে বিএনপিই বার বার দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘স্লোগান দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধ করে। ভাষা আন্দোলনও একদিনে হয়নি। তেমনি আমাদেরকেও আরো শক্তিশালী হতে হবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে৷ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে যারা অকাতরে জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন দেশে আমরা পরাধীন। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। বর্তমান মাফিয়া সরকার হটাতে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই। আগামী দিনে নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি ভোটে যাবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাকে দলীকরণের চেষ্টা চলছে৷ একটা ভঙ্গুর জাতি তৈরি করতে এই সরকার তৎপর। সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটা ভঙ্গুর অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চায় সরকার।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশে আজ কেউ নিরাপদ নয়। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে এই সরকারকে টেনে-হিঁচড়ে নামাতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সাইফুল ইসলাম নিরব।