বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সব রায় বাংলায় দিতে বাধা কোথায়?

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:৩৪

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন বিচারকের দায়িত্ব হলো সঠিক একটি রায় দেয়া। সেটা ইংরেজি হোক বা বাংলায় হোক। রায়ের ক্ষেত্রে যদি শব্দ চয়নে ভুল হয়, তাহলে তো মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। সুতরাং বিচারকের প্রথম শর্ত হলো একটা ভালো রায় দেয়া।’

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাঙালি জাতি। সারা পৃথিবী জানে গৌরবের সেই ইতিহাস। তবে এত দিনেও বাংলাদেশে সব স্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের বাধা পুরোপুরি কাটেনি।

রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগে ইংরেজির প্রভাব এখনও বেশি। উচ্চ আদালতের বেশিরভাগ রায় লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে। তবে দিন দিন বাংলা ভাষায় রায়ের সংখ্যা বাড়ছে।

আদালতে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার নিয়ে আইনজ্ঞরা বলছেন, কোন ভাষায় রায় বা আদেশ দেয়া হবে তা বিচারকের এখতিয়ার। তবে উচ্চ আদালতের বেশিরভাগ কার্যক্রমে বাংলা ভাষা চালুর জন্য মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

তারা বলছেন, ব্রিটিশদের কাছে থেকে আসা শত শত বছরে পুরানো আইনেই চলছে আদালত। সে কারণে ইংরেজিতে মামলার ড্রাফটিংসহ যাবতীয় কাজ করার প্রবণতা বেশি। বিচারকেরাও ইংরেজিতে রায় লিখে অভ্যস্ত। এ অবস্থা দূর করতে চাইলে গোড়া থেকেই পরিবর্তন শুরু করতে হবে। সবার আগে আইনের যাবতীয় বিষয় এবং শব্দমালা বাংলায় থাকতে হবে।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে এখন বাংলা ভাষায় বেশ রায় হচ্ছে। দিন দিন এটা আরও বাড়বে। একটা রায় দেয়া তো খুব সহজ না। একটি রায় দিতে হলে আইন জানতে হবে, ভাষা জানতে হবে।

‘বিখ্যাত সব আইনের বই ইংরেজিতে। সমস্ত আইন ইংরেজিতে। বড় বড় জাজমেন্ট (রায়) সব ইংরেজিতে। রায়ে ভালো কোনো রেফারেন্স দিতে হলে সে রায় ও আইন ভালো করে জানতে হবে। এখন বাংলায় রায় দিতে হলে ওই সব বিখ্যাত রায় ও আইনসমূহ বাংলায় অনুবাদ করতে হবে।’

বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলা ভাষায় রায় দিতে বেশি লেখাপড়া করতে হয়, অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। শব্দের বাংলা অর্থ জানতে হয়। ইংরেজি একটি শব্দের তিন চারটা বাংলা অর্থ হয়। রায়ের ক্ষেত্রে কোনটা প্রযোজ্য, সেটা খুব ভালো করে জেনে প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে রায়ের অর্থ বিকৃত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে রায় নিয়ে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।’

আপিল বিভাগের সাবেক এ বিচারক বলেন, ‘একজন বিচারকের দায়িত্ব হলো সঠিক একটি রায় দেয়া। সেটা ইংরেজি হোক বা বাংলায় হোক। রায়ের ক্ষেত্রে যদি শব্দ চয়নে ভুল হয়, তাহলে তো মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। সুতরাং বিচারকের প্রথম শর্ত হলো একটা ভালো রায় দেয়া। ইদানিং জজ সাহেবেরা বাংলায় রায় দিচ্ছেন। দিন দিন হয়তো আরও বাড়বে।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের অনেক রায়ই এখন বাংলায় হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের দিকে প্রথম বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বাংলায় রায় দেন। এরপর সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সাহেবও বাংলায় রায় দেন। পরে অনেকে বাংলায় রায় দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘সব রায় বাংলায় দেয়া সম্ভব নয়। এর কারণ হলো আমাদের আইনগুলো ইংরেজি, দেশি-বিদেশি যে রেফারেন্স ব্যবহার করা হয় সেগুলোও ইংরেজিতে। এছাড়া ব্যবসায়িক ম্যাটারে যে রায় দেয়া হয় সেগুলো বিদেশিরা দেখেন। সব কিছু বিবেচনায় সব রায় বাংলায় দেয়া সম্ভব হবে না। তবে আমি আশা করব উচ্চ আদালতের অধিকাংশ রায়ই এক সময় বাংলায় হবে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, রায় বাংলায় ভাষান্তর করার জন্য সফটওয়ার তৈরি করা হয়েছে, এর ফলে সব রায়ই বাংলায় ভাষান্তর করা যাবে।

সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসন সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে শতাধিক বিচারকের মধ্যে অনেকেই বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। এর মধ্যে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এছাড়া হাইকোর্টে নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন। তিনি এ পর্যন্ত কয়েক হাজার রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। এরপরই আছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। তিনিও কয়েক হাজার রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। নদীকে জীবন্তসত্তা ঘোষণা করার রায়টিও তিনি বাংলায় দিয়েছেন।

বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েকজন বিচারক বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। তারা হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি এএনএম বসির উল্লাহ, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান, বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেন।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, ’৯০-এর দশকে উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলায় কয়েকটি আদেশ ও রায় দিয়েছিলেন। তবে তা আইন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।

১৯৯৮ সালে প্রকাশিত আইন সাময়িকীর (ঢাকা ল রিপোর্টস ৫০ ও ৫১ ডিএলআর) তথ্য অনুসারে, ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও বিচারপতি হামিদুল হকের বেঞ্চ নজরুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র মামলায় বাংলায় রায় দেন।

একই সময়ে বিচারপতি হামিদুল হক অন্য একটি ফৌজদারি রিভিশন মামলাতেও বাংলায় রায় দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বিচারপতি আবদুল কুদ্দুছ, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ বাংলায় বেশ কয়েকটি রায় দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর