রাজধানীর পল্লবীতে নিজ বাসায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মোবাইল ফোন মেরামত করছিলেন হাবিব শেখ। এ সময় পুলিশের সোর্স মিজানসহ পল্লবী থানার এসআই কাজী রায়হানুর রহমান ও এএসআই মাহাবুব আসেন। তারা হাতকড়া পরিয়ে হাবিবকে থানায় নিয়ে যান।
স্বামীকে ছাড়াতে স্ত্রী সাথী আক্তার ১০ হাজার টাকা নিয়ে থানায় যান। পরে তার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা দিতে না পারায় হাবিবের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন হাবিবের স্ত্রী।
স্বামীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাথী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে মারতেছে আর বলতেছে, তোর ফ্যামিলিকে বল তিন লাখ টাকা আনতে, নাইলে তোর স্বামীকে হেরোইন মামলা দেব।’
পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ তিন লাখ টাকা কোথায় পাব? আপনি হেরোইন মামলা দেবেন কেন? আমার স্বামী তো হেরোইন খায় না। বেচেও না। ও তো পুরাতন মোবাইল কিনে বিক্রি করেন।
‘তখন ওনারা খারাপ ব্যবহার করে গালিগালাজ করেন। বাজে কথা বলেন। তখন আমি লজ্জায় ওইখান থেকে চলে আসলাম।’
ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীর গোপনাঙ্গে অত্যাচার করা হয়। তখন ও বাবাগো, মাগো বলে চিৎকার করছিল।
‘আমি তাদের বলছি, আপনারা মোবাইলের মামলা দেন। হেরোইন মামলা কেন দেবেন?’
স্বামীর মিথ্যা মামলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিচার চান তিনি।
শেখ হাসিনাকে ‘মমতাময়ী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি সবার মা। তিনি যেন বিষয়টা দেখেন।’
দুটো সন্তান আছে জানিয়ে সাথী বলেন, ‘আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হইল। গরিব হয়ে জন্মানো কি অপরাধ। আমরা তো এই দেশের নাগরিক। আমাদেরও বাঁচার অধিকার আছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অফিসে অভিযোগ জানিয়েছেন বলেও জানান সাথী।
অভিযোগ জানানোর পর কোনো সাড়া পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই। কোনো বিচার পাই নাই।’
হেরোইন মামলায় স্বামী বর্তমানে জেলে রয়েছেন বলে জানান তিনি। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তাদের নানা রকম হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিব শেখের মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘অনেক খারাপ কথা কইছে (বলছে), গালিগালাজ করছে। আমার পোলারে অনেক মারছে।’
যা বলছে পুলিশ
অভিযোগের বিষয়ে পল্লবী থানার এসআই কাজী রায়হানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
পরে অভিযোগ শুনে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গাড়ি চালাচ্ছি, পরে কথা বলেন। সরাসরি এসে কথা বলেন।’
এরপরই তিনি মুঠোফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পল্লবী থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না।’