দৈনিক সংক্রমণ কমে আসায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ আগামী মঙ্গলবার থেকে আর থাকছে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বিধিনিষেধ উঠলেও মানুষকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকছেই।
সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে রোববার ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ক্লিয়ার ইনস্ট্রাকশন দেয়া হয়েছে, আগামী পরশু থেকে তো স্কুল খোলা হবে, ১ মার্চ থেকে প্রাইমারি ওপেন হবে। এরপর থেকে আর কোনো বিধিনিষেধ দেয়া হবে না। কিন্তু সবাই যেন মাস্ক পরে সে বিষয় সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
‘যেখানেই যাবে, যে অনুষ্ঠানেই যাবে মাস্ক এনশিয়র করতে বারবার রিকোয়েস্ট করা হয়েছে। বিধিনিষেধ আর এক্সটেন্ড হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বিশেষভাবে কোভিডের বিষয়ে রিকোয়েস্ট করেছেন। সবাইকে একটি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একটু কমফোর্টের দিকে যাচ্ছি বলে কেউ যেন রিল্যাক্স না হয়ে যাই। কেবিনেট মিটিংয়েও তিনি এটা নির্দেশ দিয়েছেন সবাইকে এটা করতে হবে।’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এক কোটি ভ্যাকসিন দেয়ার একটি প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। এটার জন্য আপনাদের (সাংবাদিকদের) বিশেষভাবে রিকোয়েস্ট করা হয়েছে যেন এটা ম্যাসিভ প্রচার করেন। ফিল্ড লেবেলের সবাইকে ডিসি-এসপি-সিভিল সার্জন, মেয়র, চেয়ারম্যান সবাইকে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক লোকদেরও বলে দেয়া হয়েছে যে, এটা যেন পৌঁছে দেয়া হয় যে ফ্রি টিকা দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, কিন্তু দেখেন আমাদের পর্যাপ্ত টিকা আছে। বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে সবাই যেন সহযোগিতা করে। ২৬ ফেব্রুয়ারির পর যেন কেউ বাদ না থাকে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারও যদি এনআইডি না থাকে একটি ছোট স্লিপ নিয়েও যদি তিনি যান টিকা দিয়ে ঠিকানা ইনক্লুড করে নেয়া হবে।
‘ডব্লিউএইচও বলছে আরও একটি ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে, নিওকম। সেটা যে ওমিক্রনের মতো এত সহজ হবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিন্তা করছে, ১২ বছরের নিচেও কীভাবে টিকা দেয়া যায়। পৃথিবীর যে সব দেশে দেয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানেও যেন শুরু করে দেয়া যেতে পারে। ক্লাস সিক্সের অনেক বাচ্চার অসুবিধা হচ্ছে, কারণ তার হয়তো এখনো ১২ বছর হয়নি।’
করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১৩ জানুয়ারি সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ আরও পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার।
এসব বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক জনসমাবেশ, অফিসে অর্ধেক জনবল, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতে টিকা কার্ড প্রদর্শনসহ অন্য সব বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হলে এবার সর্বোচ্চ শনাক্ত এবং শনাক্তের হারে রেকর্ড দেখে বাংলাদেশ। এক দিনে শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। যা দেশে করোনার সর্বোচ্চ শনাক্ত হার। ধীরে ধীরে সেই হার কমে এখন ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
সেই সঙ্গে দৈনিক সংক্রমণ কমে ২ হাজারের ঘরে নেমেছে।
করোনার ওমিক্রন ধরন বেশি সংক্রামক হলেও কম প্রাণঘাতী বলে সরকার বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলের পক্ষে। এই বিধিনিষেধ শিথিল করতে সরকারকে সুপারিশও করেছে করোনা নিয়ে গঠিত সরকারের পরামর্শক কমিটি।
তাই বন্ধ স্কুল-কলেজ ২২ তারিখ থেকে খুলে দেয়ার ঘোষণা এসেছে সরকারের কাছ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আগামী ১ মার্চ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার ঘোষণা এসেছে সরকারের কাছ থেকে।