তথ্য গোপন করে ও মিথ্যা বলে প্রতারণা করায় ক্ষমা চেয়েছেন ময়মনসিংহের সোহেল মিয়া। তার দাবি, অভাবের কারণে তথ্য গোপন করলেও শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশনকে তিনি সত্যি ভালোবাসেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই অভাবী ছিলাম। এ জন্য ঠিকমতো সংসার চালাতে পারতাম না। ২০০৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়ার পর মোবাইলের মাধ্যম রওশনের প্রেমে পড়ে যাই। একপর্যায়ে দুজন বিয়ে করি।’
বিয়ের পর থেকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে থাকতে শুরু করেন সোহেল ও রওশন দম্পতি।
সোহেল আরও বলেন, ‘স্ত্রীকে নিয়ে তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার পর এখানকার বাসিন্দা হিসেবে ভোটার আইডি কার্ড করেছি। মোখলেশুর রহমান বকুল বদলে নিজের নাম দিয়েছি সোহেল মিয়া। নিজেকে শিক্ষিত পরিচয় দিলে ভালো হবে এমন ধারণা থেকে বলেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স, মাস্টার্স করেছি। আমি আসলে এসএসসি পরীক্ষাও দেইনি।
‘আমি মিথ্যা বলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলাম। এ জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এটাও সত্যি যে আমি আমার প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রওশন ও সোহেলকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হয়। চলাফেরায় অক্ষম স্ত্রীকে ১৫ বছর ধরে কোলে-পিঠে তুলে বহন করে আসছেন সোহেল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই দম্পতির জন্য নানা সহায়তার ব্যবস্থাও করে স্থানীয় প্রশাসন।
এরই মধ্যে নিউজবাংলার কাছে খবর আসে, সোহেলের নাম আসলে মোখলেশুর রহমান বকুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে আগেও একটি সংসার ছিল তার। সেখানে তার চার সন্তান আছে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে রওশনের সঙ্গে সংসারের খবর দেখে শুরাতন বেগম তার স্বামীর কথা জানতে পারেন। এত দিন তিনি স্বামী নিখোঁজ বলে জানতেন।
সোহেলের প্রথম স্ত্রী ও তিন ছেলে। ছবি: নিউজবাংলা
এরপর দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
প্রথমে সোহেল সব মিথ্যা বলে দাবি করলেও পরে স্বীকার করেন। স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে তাদের প্রতি সংসার না ভাঙার আরজি জানান রওশন।
শুরাতনের উদ্দেশে রওশন বলেন, ‘আমার সংসারটা ভাঙবেন না। আমি আপনার মতো সুস্থ না। আমি একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে। যদি আপনারা আসতে চান আসুন। আমি হাসিমুখে বরণ করে নেব।’
এর জবাবে শুরাতন-সোহেল দম্পতির বড় ছেলে সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সত্যটা তুলে ধরতে চেয়েছি। সত্যটা সবাই জেনেছেন। এ নিয়ে আবার সংসার ভাঙার কথা বলা হচ্ছে। আমি বলতে চাই, কারও সংসার ভাঙার জন্য নয়, শুধু সত্যটা তুলে ধরেছি।
‘তারা তাদের মতো থাকুক, মাকে নিয়ে আমরা ভালো আছি। আমাদের আর কিছু বলার নেই, আমাদের কোনো চাওয়া নেই।’