শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার দুটি ভবনের দেয়ালে আঁকা রয়েছে দুটি গ্রাফিতি। একটি ঢাকার আলোচিত গ্রাফিতি ‘সুবোধ’-এর আদলে। টেলিফোনে কথা বলছে ‘সুবোধ’।
আরেকটিতে একটি অন্ধকার ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা হাতে রয়েছে একটি হলুদ ফুল। দুটো গ্রাফিতিতেই ইংরেজি অক্ষরে লেখা রয়েছে- ‘হবেকি?’
গ্রাফিতিগুলো কে বা কারা এঁকেছেন তা জানা না গেলেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধারণা, তাদের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েই কেউ এমন গ্রাফিতি এঁকেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন- এই গ্রাফিতিগুলোই প্রমাণ করছে, আমাদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষদেরও সংহতি আছে।
উইকিপিডিয়ার মতে, গ্রাফিতি হলো অনুমতি ছাড়াই জনসাধারণের অভিমতকে শৈল্পিকভাবে কোনো দেয়ালে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরা। স্প্রে পেইন্ট বা মার্কার পেন সাধারণত গ্রাফিতি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৯ জানুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন তাদের কয়েকজন। ২৬ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ক্যাম্পাসে এসে দাবি পূরণে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দিলে গত ১২ ফেব্রুয়ারি টানা ২৭ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলেও ওই ক্যাম্পাসে এখনও রয়ে গেছে আন্দোলনের রেশ। উপাচার্য আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতেও দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে শাবি ক্যাম্পাসের পাশে দেখা গেল এ দুটি গ্রাফিতি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সিলেটের আখালিয়া এলাকার। ওই এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পাশের দেয়ালে একটি ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পাশের দেয়ালে একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে গ্রাফিতিগুলো চোখে পড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সুবোধের আদলের গ্রাফিতিটি আঁকা রয়েছে বিজিবি ক্যাম্পের পাশের দেয়ালে। এতে দেখা যায়, শ্মশ্রুমণ্ডিত ঝাঁকড়া চুলের একজন টেলিফোনে কথা বলছেন। টেলিফোনের তার যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে লেখা রয়েছে- HOBEKI?
এই ধাঁচের গ্রাফিতি ২০১৭ সালের দিকে দেখা গিয়েছিল রাজধানী ঢাকায়ও। ছবির পাশে লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় এখন পক্ষে না’ –এমন সব বাক্য তখন আলোড়ন তুলেছিল। সেই ‘সুবোধ’-এর আদলেই আঁকা হয়েছে বিজিবি ক্যাম্পের পাশের গ্রাফিতিটি।
অন্যদিকে মাউন্ড এডোরা হাসপাতালের পাশের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে দেখা যায়, একটি অন্ধকার ঘরে জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে একটি হাত। সেই হাতে গোঁজা রয়েছে হলুদ একটি ফুল। এই জানালার ওপরেও লেখা রয়েছে- HOBEKI?
মাউন্ড এডোরা হাসপাতালের পাশের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র শাহরিয়ার আবেদিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাফিতিগুলো আমাদের বিশ্বদ্যিালয়ের পাশেই আঁকা হয়েছে। তা ছাড়া গ্রাফিতির ধরন দেখেও বোঝা যায় এগুলো আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি ও সমর্থন জানিয়ে আঁকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের পিটিয়েছে। তবু আমরা তাদের ফুল দিয়েছিলাম। একটি গ্রাফিতিতে এ রকম কিছু একটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর সুবোধের ফোনে কথা বলার গ্রাফিতিটিতে আমাদের দাবি পূরণে উচ্চমহলের আশ্বাসের বিষয়টি বোঝানো হতে পারে।’
গ্রাফিতি এক ধরনের প্রতিবাদী চিত্রকর্ম উল্লেখ করে চিত্রশিল্পী সত্যজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘সাধারণত গ্রাফিতি যারা আঁকেন তাদের নাম জানা যায় না। গোপনেই এগুলো আঁকা হয়। অনেক আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দেয়ালে এমন প্রতিবাদী চিত্র আঁকার প্রবণতা রয়েছে। গ্রাফিতিতে সাধারণ সময়ের চিত্র বা কোনো একটি ঘটনা বা অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়।