স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে তাদের প্রতি সংসার না ভাঙার আরজি জানিয়েছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের সেই শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশন।
সোহেল মিয়ার প্রথম স্ত্রী শুরাতন বেগমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার সংসারটা ভাঙবেন না। আমি আপনার মতো সুস্থ না। আমি একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে। যদি আপনারা আসতে চান আসুন। আমি হাসিমুখে বরণ করে নেব।
‘এখন বলতেছেন উনি আপনার স্বামী। তাহলে সে হারানোর সময় থানায় জিডি করলেন না কেন? হারানোর কথা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানাতে পারতেন। তাও তো করলেন না।’
সোহেল-শুরাতন দম্পতির বড় ছেলে সিহাব উদ্দীনের উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি যদি আসতে চাও বাবা, আমি তোমাকে হাসিমুখে বরণ করে নেব। তুমি কি আসবা? শুনেছি তুমি দোকানদারি করো, আমিও দোকানদারি করি৷ আসতে চাইলে চলে আসো। সবাই একসঙ্গে দোকানদারি করি।’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রওশন ও সোহেলকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হয়। চলাফেরায় অক্ষম স্ত্রীকে ১৫ বছর ধরে কোলে-পিঠে তুলে বহন করে আসছেন সোহেল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই দম্পতির জন্য নানা সহায়তার ব্যবস্থাও করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এরই মধ্যে নিউজবাংলার কাছে খবর আসে, সোহেলের নাম আসলে মোখলেশুর রহমান বকুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে আগেও একটি সংসার ছিল। সেখানে তার চার সন্তান আছে।
সোহেলের প্রথম স্ত্রী ও তিন ছেলে। ছবি: নিউজবাংলা১৬ বছর আগে দাম্পত্য কলহের জেরে বাড়িতে কিছু না বলেই তিনি বের হয়ে যান। আর ফেরেননি। আগের স্ত্রীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদও হয়নি। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে রওশনের সঙ্গে সংসারের খবর দেখে শুরাতন তার স্বামীর কথা জানতে পারেন।
দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
সোহেলের আগের সংসারের কথা জানতে পেরে রওশন বলেন, ‘আমার স্বামী কী অন্যায় করেছে, অপরাধ করেছে সেটা বিষয় না। আমাকে সে ভালোবাসে, আমিও তাকে ভালোবাসি। আমাদের ১৫ বছরের সংসারে সে আমাকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। তার আগে কী করল, না করল এগুলো গণমাধ্যমে কেন আনতেছেন?
‘সে আমাকে ভালোবেসে ১৫ বছর ধরে পড়ে আছে। ধন-সম্পদ কোনো কিছু তাকে দিতে পারিনি। শুধু ভালোবাসাই আমাদের সম্বল। আমার স্বামীর হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ও যদি শত অন্যায়ও করে ওই পরিবারের কথায় গণমাধ্যমে আর সংবাদ প্রকাশ করবেন না। তাহলে আমার সংসারটা ভেঙে যেতে পারে। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ, আমি আমার স্বামীকে নিয়ে থাকতে চাই।’
আগের স্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে সোহেলকে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে সব মিথ্যা বলে দাবি করেন।
পরে বলেন, কলহের জেরে ২০০৫ সালে স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে আসেন। এখানে এসে রওশনের প্রেমে পড়েন। রওশনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এতদিন অতীত গোপন করেছেন। ময়মনসিংহের ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে প্রতিবন্ধী এই নারীর সঙ্গে ১৫ বছর ধরে সংসার করছেন।
সোহেলকে এখন আর ফিরে পেতে চান না বলে জানান তার ছেলে সিহাব। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুই চাই না। তবে যে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে, এটাই দেশবাসীকে জানাতে চাই। তাই কথা বলছি। তিনি আমার বাবা, ছেলে হলেও বলতে হচ্ছে তিনি মিথ্যা বলছেন। সে সেবা করতে সেখানে যায়নি, আসলে সে লুকিয়ে থাকতেই সেখানে গিয়েছে।’