বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুক্তা-মনির মরদেহ পুকুরে যেভাবে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:১১

ওসি জহুরুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ফাতেমা কনা শিশুদের হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এর পরও তদন্তের নানা পদক্ষেপ আছে। তদন্ত শেষে জবানবন্দির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

যমজ কন্যাদের হত্যার পর মা কানিজ ফাতেমা কনা নিজেই মরদেহ পুকুরে ফেলে দেন। তারপর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেন। পরে হত্যার দায় অন্যের ওপর চাপাতে স্বজন ও পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দেন।

কনাকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ শনিবার এসব তথ্য জানায়।

শুক্রবার সকালে খুলনার তেরখাদার ছাগলাদাহ ইউনিয়নের কুশলা গ্রামে নানাবাড়ির পাশে একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় যমজ শিশু মুক্তা ও মনির মরদেহ। ২ মাস ১১ দিন বয়সী শিশুদের পুকুরে ফেলেছে কে, তা নিয়ে তৈরি হয় রহস্য। শত্রুতাবশত কেউ ঘরের দরজা খোলা পেয়ে তার শিশুদের হত্যার পর পুকুরে ফেলেছে বলে তখন দাবি করেছিলেন কনা।

পুলিশ তদন্তে নেমে দ্রুতই খুলে ফেলে রহস্যের জট। মরদেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা পর শিশুদের মা ফাতেমা কনা, নানা আবদুল খায়ের শেখ ও নানি শরিফা খাতুনকে থানায় ডেকে নেয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। রাত পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর কনাকে আটক রেখে পুলিশ তার বাবা ও মাকে ছেড়ে দেয়। পরে রাতেই শিশুদের বাবা মাসুম বিল্লাহ একটি হত্যা মামলা করেন।

শনিবার দুপুরে তেরখাদা থানার ওসি জহুরুল আলম জানান, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কনা যমজ কন্যাদের হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মানসিক বিকারে তিনি এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটান বলে দাবি করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনামুল হক জানান, চার বছর আগে তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ ইউনিয়নের কুশলা গ্রামের আবদুল খায়ের শেখের মেয়ে কানিজ ফাতেমা কনার বিয়ে হয় মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের মাতারচর গ্রামের মোল্লা মাসুম বিল্লাহর সঙ্গে।

কনা অন্তঃসত্ত্বা হলে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানেই যমজ কন্যার জন্ম হয়। এরপর কনা স্বামীর বাড়িতে ফেরত যাওয়ার আগেই দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে পুকুর থেকে।

রহস্য উদ্ঘাটন বিষয়ে ওসি জহুরুল আলম বলেন, ‘যমজ বাচ্চার মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল করা হয়। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আইনি প্রক্রিয়ার মাঝেই শুক্রবার বিকেলে ডেকে নিয়ে শিশুদের মা, নানা ও নানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

‘মা ফাতেমা কনা অসংলগ্ন কথা বলায় সন্দেহ বেড়ে যায়। পরে টানা জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন।’

পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে ফাতেমা কনা দাবি করেন, স্বামীর প্রতি সন্দেহ, অবিশ্বাস আর রাগের কারণে দুই সন্তানকে তিনি হত্যা করেন। আর যমজ শিশুদের অহেতুক কান্না তাকে বিরক্ত করে ফেলেছিল।

বিয়ের তিন বছরের মাথায় অন্তঃসত্ত্বা হলে কনাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সন্তান প্রসবের পর ২ মাস ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও স্বামী তাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন না। বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে দফায় দফায় স্বামীকে অনুরোধ করেন কনা। কিন্তু মাসুম বিল্লাহ বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিচ্ছিলেন।

কনার বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘রাতে শিশু মনি ও মুক্তা একই সঙ্গে কান্নাকাটি করছিল। মা তাদের দুধ পান করালেও তাদের কান্না থামেনি। রাত আড়াইটার দিকে প্রথমে কনা বাচ্চাদের চড় মারেন, পরে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন। তখন শ্বাসরোধে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এরপর বাচ্চাদের মরদেহ ঘরের পাশে পুকুরে ফেলে দেন।

‘শিশুদের মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়ার পর ঘরের দরজা খুলে ঘুমিয়ে পড়েন কনা। ঘুম থেকে জেগে ৪টার দিকে কনা নিজেই চিৎকার শুরু করেন শিশুদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে। প্রতিবেশী ও স্বজনরা শিশুদের খুঁজতে থাকেন। এরই একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুরে দুই শিশুর মরদেহ দেখতে পান তাদের নানি শরিফা খাতুন ও মামা নুর আলম। শত্রুতাবশত দুই বাচ্চাকে কেউ ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যার পর পুকুরে ফেলে দিয়েছে বলে কনা তখন দাবি করেন।’

ওসি জহুরুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি কনা নিজের শিশুদের হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এর পরও তদন্তের নানা পদক্ষেপ আছে। তদন্ত শেষে জবানবন্দির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর