বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক যাত্রায় আয়ের একমাত্র ভরসা হারাল ৫ পরিবার

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:৫৫

সাইফুলের সংসারে রয়ে গেলেন স্ত্রী ও দুই বাকপ্রতিবন্ধী সন্তান। তার শাশুড়ি হাজেরা বেগম জানান, সাইফুলের ইচ্ছা ছিল টাকা জমিয়ে ছেলে ও মেয়ের চিকিৎসা করাবেন। সে জন্য সকাল-সন্ধ্যা বাসের ট্রিপ নিতেন।

পাশাপাশি বাড়ি, বেড়ে ওঠা একসঙ্গেই। সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেও তারা ছিলেন বন্ধু। দুজন মিলে ফলের ব্যবসা করতেন। শেষযাত্রাতেও তারা হলেন একে অন্যের সঙ্গী।

এ গল্প কুমিল্লার বুড়িচংয়ের ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের কংশনগর গ্রামের জালাল উদ্দীন ও আলমগীর হোসেনের। বুড়িচংয়ে শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাদের। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুরের পর পারিবারিক কবরস্থানের পাশাপাশি দাফন করা হয় দুই ভাইকে।

তাদের আরেক চাচাতো ভাই মনির হোসেন আখন্দ নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিদিন ভোরে নিমসার পাইকারি বাজার থেকে ফল কিনে বাড়ির পাশের কংশনগর বাজারে বিক্রি করতেন জালাল ও আলমগীর। ফল কিনতে শুক্রবারও ভোরে অটোরিকশায় করে নিমসারের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। পথে ময়নামতী তুতবাগান এলাকায় ড্রামট্রাক অটোটিকে চাপা দিলে নিহত হন তারা।

মনির আরও জানান, নিহত জালালের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং আলমগীরের স্ত্রী ও এক ছেলে আছে। সংসারের জন্য তারা দুজনই ছিলেন উপার্জনকারী। দুটি পরিবারই এখন অসহায়।

শুক্রবার ভোরের ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আরও তিনজন।

তাদের একজন তিশা পরিবহন বাসের চালক সাইফুল ইসলাম। সকাল ৮টার মধ্যে বাসের ট্রিপ ধরতে হবে বলে ভোরে অটোতে করে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন। পথে হারালেন প্রাণ।

সাইফুলের সংসারে রয়ে গেলেন স্ত্রী ও দুই বাকপ্রতিবন্ধী সন্তান। তার বাড়ি দেবীদ্বারের ছগুরা গ্রামে।

তার শাশুড়ি হাজেরা বেগম জানান, সাইফুলের ইচ্ছা ছিল টাকা জমিয়ে ছেলে ও মেয়ের চিকিৎসা করাবেন। সে জন্য সকাল-সন্ধ্যা বাসের ট্রিপ নিতেন।

হাজেরা বলেন, ‘আমার মাইয়াডা আর নাতি-নাতনিডার কী অইব? কেমনে চলব আমার মাইয়াডা? আমি এহন কিতা করতাম? আল্লায় কী করল এইডা?’

সাইফুলের ছোট ভাই মো. রাকিব বলেন, ‘ভাইয়া প্রতিদিন বাসের ট্রিপ লইয়া ঢাকা যাইত। পুরো সংসারের দায়িত্বটা ভাইয়ার ওপর ছিল। ভাইয়া অনেক কষ্ট করত। এখন ভাইয়া চলে গেল। আমরার জীবনডা দোজগ হইয়া গেছে। আমার ভাতিজা-ভাতিজি এতিম হয়ে গেল।’

এই দুর্ঘটনায় নিহত হন বুড়িচংয়ের পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের সাদকপুর গ্রামের হাজি জুলহাস ও জহিরুল ইসলাম। জুলহাস ওই অটোরিকশার চালক ছিলেন। আর জহিরুল দিনমজুর। কাজের খোঁজে জুলহাসের সঙ্গে তিনি শুক্রবার ভোরে নিমসারের দিকে যাচ্ছিলেন।

পীরযাত্রাপুরের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু তাহের নিউজবাংলাকে জানান, জুলহাসের বাড়িতে আছেন বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে। জহিরুলের আছে দুই শিশুসন্তান। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এই দুজন নিজ নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।

তাহের বলেন, ‘আমার এখনও শপথ হয়নি। তবে দুটি পরিবার খুবই দরিদ্র্র। আমি চেষ্টা করব ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে। শপথ নেয়ার পর সুযোগ পেলেই তাদের জন্য সরকারি ফান্ডের ব্যবস্থা করব।’

কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের বুড়িচংয়ের সিন্ধুরিয়াপাড়া কাটাজঙ্গল তুতবাগান এলাকায় শুক্রবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এই দুর্ঘটনা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ময়নামতী হাইওয়ে থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, ড্রামট্রাকটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। সে সময় কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্টমুখী অটোরিকশাকে এটি চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই ৫ জনকে মৃত পাওয়া যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহত দুজনকে হাসপাতাল পাঠানো হয়।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহাদাত হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর