চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক। চার লেনের এই মহাসড়কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের প্রধান ফটক ১ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে চলে গেছে।
ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য শাটল ছাড়াও প্রতিদিন হাজারও শিক্ষার্থীকে নামতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে। ফিরতেও হয় এই পথ দিয়ে।
ছোট-বড়ো অনেক দুর্ঘটনার পরও ব্যস্ততম এই সড়কের গেট পয়েন্টে নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ। এতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত রাস্তা পার হতে হয় ঝুঁকি নিয়ে।
একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে চিঠি দেয়ার কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সওজ বলছে, তারা কোনো চিঠি পায়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি কবে পূরণ হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
গত বছরের ২০ অক্টোবর ১ নম্বর গেটে পিকআপ ভ্যানে মালামাল তোলার সময় বাসের ধাক্কায় দুই শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও একজন। এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একটি স্পিড ব্রেকার দেয়া হলেও সেটিরও বেহাল অবস্থা।
সরেজমিন দেখা যায়, ব্যস্ততম এই সড়কে চলছে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িগামী বাস, ট্রাক, লোকাল মিনিবাস, টমটম, বাইকসহ নানা যানবাহন। বেশিরভাগ গাড়িই চলছে দ্রুত গতিতে।
গতিরোধক স্পিড ব্রেকারের একটি অংশ ক্ষয় হয়ে গেছে। ফলে অটোরিকশা, বাস-ট্রাকের গতি কমিয়ে চলতে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থী ও পথচারীরা হাত উঁচিয়ে সংকেত দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফিরতে রাস্তা পার হয়ে বাস কিংবা অটোরিকশায় উঠতে হয় তাদের।
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রশ্ন উঠেছে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে। অনেক বছর আগে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি উঠলে তা এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেকে।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবাসিক-অনাবাসিক মিলিয়ে কমবেশি ১০-১২ হাজার শিক্ষার্থী বাসে করে আসা-যাওয়া করে এই ১ নম্বর গেট দিয়েই-যেটি আবার চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি পয়েন্ট।
‘জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে এই মহাসড়কে গাড়ির চাপ কেমন সেটা এই রোডের নিয়মিত যাত্রী মাত্রই জানার কথা। পরিতাপের বিষয় হলো একটা ফুটওভার ব্রিজের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১২ হাজার শিক্ষার্থীর জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়েই চার লেনের মহাসড়কটি পার হন প্রতিদিন ।’
সুমাইয়া ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্পিড ব্রেকার দিলেও সেটির কোনো সংস্কার নেই, ফলে কোনো লাভ হচ্ছে না। মহাসড়কে স্পিড ব্রেকারও কোনো স্থায়ী সমাধান না। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় ফুটওভার ব্রিজ লাগবে। ব্রিজ নির্মাণের পর সবাই যাতে সেটি ব্যবহার করে তা নিশ্চিত রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একবার বলেছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে বলেছিলাম, ভিসির মাধ্যমে একটি চিঠি দিতে। সেই চিঠি পাইনি।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, ‘আমরা সওজকে একটি চিঠি দিয়েছি। তারা এ বিষয়ে পজিটিভ। তারা সয়েল টেস্টও করিয়েছে। ডিজাইনও করেছে। ইস্টিমেট পাশের পর বাজেট বরাদ্দ হলে ওরা কাজ করবে। এটা তাদের হাতে।’
চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সওজ চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছিলাম।’