শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির ঝাড়ুদার। আবর্জনা, মৃত প্রাণী এদের খাবার বলে অনেকেই শকুন দেখে নাক সিটকায়; ঝাড়ুদার নামকরণও এ কারণে। তবে এগুলোর এই খাদ্যাভাসের কারণে পরিবেশ থাকে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত।
বাংলাদেশে শকুনের দেখা মেলা এখন ভার। ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই প্রাণী চোখে পড়ে প্রায়ই। শীত মৌসুমে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসে এগুলো।
দীর্ঘপথ পাড়ি দেয় বলে দেশে ঢুকতেই অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নামে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এদের পরিণতি হয় মৃত্যু।
যেগুলো কোনো রকমে বেঁচে থাকে, সেগুলোকে উদ্ধার করে নেয়া হয় দেশের একমাত্র শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সিংড়া ফরেস্ট বা জাতীয় উদ্যানে।
চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠলে ওই পরিচর্যা কেন্দ্র থেকেই এগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয় আকাশে।
সিংড়া জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গেছে, এখানে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। প্রতি বছর সুস্থ হওয়া ২০ থেকে ২৫টি শকুন এখান থেকে অবমুক্ত করা হয়। এর মধ্যে গত এক বছরে উদ্ধার হওয়া ৩২টি শকুনের মধ্যে অবমুক্ত করা হয়েছে ১২টি।
বাকি ২০টি এখন সুস্থ, দিনক্ষণ ঠিক করে এদেরও ডানা মেলতে দেয়া হবে আকাশে।
শকুনদের চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের চিকিৎসক খাদিজা বেগম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পরিচর্যাকেন্দ্রে থাকা ২০টি শকুন এখন অনেক ভালো আছে। এদের গত এক বছরে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসা হয়। আমাদের তত্ত্বাবধানে শকুনগুলো এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশে শকুন বিলুপ্তির পথে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘শকুনই একমাত্র প্রাণী, যা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, ক্ষুরারোগের সংক্রমণ থেকে অবশিষ্ট জীবকূলকে রক্ষা করে। তবে বড় বড় গাছ, খাদ্যের অভাব ছাড়াও বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের বেশি ব্যবহারের কারণে শকুন এখন বিলুপ্তির পথে।’
তত্ত্বাবধায়ক হরিপদ দেবনাথ বলেন, ‘শীত মৌসুমে অন্য দেশ থেকে আসা ক্লান্ত ও অসুস্থ শকুনকে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে এই পরিচর্যা কেন্দ্রে আনা হয়। চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। পরিবেশের জন্য ভীষণ উপকারী এই প্রাণী একনজর দেখতে উদ্যানে শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায়।’
কেন্দ্রের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম দিপু জানান, ২০১৬ সালে বন বিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে কেন্দ্রটি চালু করা হয়। এরপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪৯টি শকুনকে সুস্থ করে অবমুক্ত করা হয়েছে।
শুধু ২০২১ সালেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে ৩২টি।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশে উড়িয়ে দেয়া হয় সুস্থ শকুনগুলোকে।