ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা গ্রামে বেশ পরিচিত সাধু তপন ফকির। গ্রামের ওঝা বলা যায় তাকে, অসুস্থদের সারিয়ে তোলার নানা টোটকা-ঝাড়ফুঁক দেন তিনি।
তপন জানান, ৩০ বছর আগে কোনো একদিন স্বপ্নে আদেশ পান, মাঘ মাসের শেষে ৩ দিন ধরে নৌকার মধ্যে দুধে ভিজিয়ে চিতই পিঠা ভক্তদের খাওয়াতে হবে। তাতে বাড়বে দৈবশক্তি।
সেই থেকে আজ অব্দি প্রতিবছর এই সময় তিনি গ্রামবাসীকে নৌকার গলুইয়ে ভেজানো দুধ চিতই খাওয়ানোর আয়োজন করেন।
এবারও চলছে এই আয়োজন। ‘তপন ফকিরের মেলা’ নামে পরিচিত এই দুধ চিতই উৎসব শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে; চলবে শনিবার পর্যন্ত। উৎসবই বলা চলে একে। কারণ নৌকার গলুইয়ে গরম দুধে ভেজানো চিতই খেতে আশপাশের এলাকা থেকেও লোকজন সেখানে যায়।
মূলত সন্ধ্যায় শুরু হয় পিঠা খাওয়ার আয়োজন।
সাধুর বাড়িতে শুক্রবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেছে, ৬টি মাটির চুলায় তৈরি হচ্ছে চিতই পিঠা। কিছু দূরে বড় দুই পাতিলে জাল দেয়া হচ্ছে দুধ, আরেকটিতে ফুটছে খেজুরের রস।
উঠানের ঠিক মাঝখানে রং ও নকশা করা একটি নৌকা রাখা। এর গলুইতে পলিথিন বিছানো, কিনারে লাগানো আছে লাল পতাকা। ফুল দিয়ে সাজানো একটি বৈঠাও রাখা আছে। জ্বালানো হয়েছে মোমবাতি।
সন্ধ্যা নামার পর পাতিলে দুধ আর খেজুরের রস মিশিয়ে ঢেলে দেয়া হলো নৌকায়। এর মধ্যে ডুবিয়ে দেয়া হলো চিতইগুলো। বাটিতে তুলে তুলে পরিবেশন করা হলো ভক্ত ও দর্শনার্থীদের।
সাধুর বাড়ির খাদেম আব্বাস খাদেম জানান, প্রতিদিন মেলায় ৫ মণ দুধ, ১ মণ রস আর ১০ হাজার পিঠা ভেজানো হয়। রাত নাগার প্রায় সবই শেষ হয়ে যায়।
ব্যতিক্রমী এই পিঠা উৎসব দেখতে এসেছেন সমাজকল্যাণ সংগঠন ‘আমরা করব জয়’ এর সভাপতি আহমেদ সৌরভ।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি ইউনিক জায়গায় গেছিলাম। আমি জীবনে কোথাও দেখি বা শুনি নাই এ রকম নৌকার মধ্যে ভেজানো পিঠার কথা।’
ওই গ্রামের দুবাইপ্রবাসী উৎপল রায় বলেন, ‘দেশে এসেই মেলার আয়োজন হবে জেনে এখানে পিঠা খেতে এসেছি। একদম গরম ভেজানো পিঠা। খুবই সুস্বাদু খেতে এই পিঠা।’
তবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের মধ্যে দুধ-চিতই পরিবেশন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে কি না- তা জানতে ফোন করা হয় সিভিল সার্জন সিদ্দিকুর রহমানকে।
তিনি বলেন, ‘পলিথিন তো এমনিতেই ক্ষতিকর। পলিথিনের মধ্যে যে কোনো গরম জিনিস রাখাটা অস্বাস্থ্যকর। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মেলা করে লোক সমাগম করাটাও ঠিক না। আমি সেখানে লোক পাঠিয়ে বিষয়টা দেখব।’