ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ট্রাকচাপায় শিশু নিহতের ঘটনায় মামলা করায় মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আসামি আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ভয়ে এখন বাড়িছাড়া বাদী শিশুর বাবা ও চাচা।
নিহত রাসেলের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়িতে রাসেলের মা, দাদিসহ অন্য সদস্যরা থাকলেও আসামি কাপ্তান মিয়া ও তার লোকজনের ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন বাবা আওয়াল ও চাচা দাউদ।
সোমবার দুপুরে বাড়ির পাশে বন্ধুদের নিয়ে খেলার সময় স্থানীয় একটি ইটভাটার মাটি আনা-নেয়ার কাজে নিয়োজিত একটি ট্রাক প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া রাসেলকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মঙ্গলবার রাতে নাসিরনগর থানায় অভিযোগ দিলেও তা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে বুধবার সকালে।
মামলার দুই দিন পার হলেও আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, হুমকির বিষয়ে পরিবার কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
নিউজবাংলাকে নিহত রাসেলের মা শাহানা বেগম বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হওয়ার পর কাপ্তান মিয়া তার লোকজনকে দিয়ে আমার স্বামীকে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে সে বাড়িছাড়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাপ্তানের ছেলে খোকন এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ প্রতিদিন বাড়িতে ও এলাকায় আসছে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।’
আওয়াল মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘কাপ্তান ও তার লোকজন হুমকি দিচ্ছে পাঁচ-ছয়টাকে মেরে ফেললেও কিছু হবে না। তাদের ভয়ে পালিয়ে এখন অন্যখানে আছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাপ্তানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
এ বিষয়ে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, ‘হুমকির বিষয়ে পরিবার কোনো অভিযোগ জানায়নি। তবে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হবে। ইতিমধ্যে ট্রাক্টরচালকের পরিচয় জানা গেছে। দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
সোমবার ট্রাকচাপায় রাসেলের মৃত্যুর পর তাকে হত্যার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিকেলে মরদেহ নিয়ে আওয়াল মিয়াসহ তার স্বজন ও এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করেন। সন্তান হত্যার বিচার না হলে মরদেহ দাফন করবেন না বলে জানান। পরে পুলিশ গিয়ে মামলা নেয়ার আশ্বাস দিলে মরদেহ দাফন করে পরিবার।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে নাসিরনগর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। তা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয় বুধবার সকালে।
ইটভাটার মালিক কাপ্তান মিয়ার নির্দেশেই ট্রাক তার সন্তানকে চাপা দেয় অভিযোগ করে আওয়াল বলেছিলেন, ‘ইটভাটার কাজে ট্রাক চলাচল করায় ওই সড়ক নষ্ট হচ্ছিল। এই জন্য কাপ্তান মিয়াকে আমি বাধা দেই। পরে কাপ্তান মিয়া আমাকে হুমকি দেয়। ট্রাকের সামনে যা পড়বে সব মাটির সঙ্গে পিষে দিতে তার লোকজনকে বলে। সোমবার দুপুরে ট্রাকচাপায় আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে।’