দুইবছর আগে পদ মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বহাল তবিয়তে আছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সচিব জাফর ইকবাল।
পরিষদের গঠনতন্ত্রকে তোয়াক্কা না করে পদ না ছাড়ায় শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের ঐক্য ও সংহতিতে স্থবিরতা এসেছে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক।
তাদের অভিযোগ, জাফর ইকবাল পদ না ছাড়ায় তিন বছর ধরে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়নি। হিসেব নেই সংগঠনের বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের পাঁচ লাখ টাকার।
ক্ষোভ জানিয়েছে কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও। তারা বলেন, ‘শিক্ষকরাই যদি অবৈধভাবে চেয়ার আকড়ে ধরে রাখে তাহলে তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখব। সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের ২৪ মে এ কলেজে শিক্ষক পরিষদ গড়ে ওঠে। এর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষকদের ন্যায় সংগত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং ঐক্য ও সংহতির মনোভাব নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া নিয়মিত পাঠদানের বাইরে শিক্ষকদের চিত্তবিনোদনে প্রতিবছর বার্ষিক ডিনার, বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলা, ভ্রমণসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেবামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত থাকতে তাদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা।
কিন্তু গত তিনবছরে এর একটিও করতে পারেননি জাফর ইকবাল। বরং শিক্ষকদের কাছ থেকে সরাসরি চাদা, কলেজের দুটি পুকুরের মাছ চাষের লভ্যাংশসহ বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার আয়-ব্যয়ের হিসেব থেকে পরিষদের সাধারণ সদস্যরা বঞ্চিত হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও দুই বছরেও কলেজের পরিষদ সচিবের নির্বাচন হয়নি কলেজটিতে। ছবি: নিউজবাংলা
আরও জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ এক বছর হলেও গত ২০১৯ সালে কমিটি গঠনের তিন বছরেও কোনো নির্বাচন হয়নি। তবে এ নিয়ে সচিবের কোনো মাথাব্যাথাও নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, করোনা ভাইরাসের খোড়া অজুহাত দেখিয়ে জাফর ইকবাল নির্বাচন না দিলেও এই সময়ে ঠিকই যশোর সরকারী কলেজ, নোয়াখালী সরকারী কলেজ ও ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু তিনিই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে সচিবের পদ আকড়ে ধরে আছেন।
শিক্ষকদের কয়েকজন আরও জানান, জাফর ইকবাল কলেজের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কমিটিতে তার কাছের লোকজনকে একাধিকবার রাখলেও কলেজের দক্ষ ও পুরোনো কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে কমিটিতে স্থান দেননি। এ ছাড়া, গত তিন বছরে শিক্ষক পরিষদের কোনো উন্নয়নও চোখে পড়ার মত ছিল না।
অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘তিনবছর মেয়াদে তার নির্বাচন দেয়া উচিত ছিল।’
রসায়ন বিভাগের আরেক শিক্ষক বলেন, ‘পুকুর থেকে মাছ চাষের লভ্যাংশ পরিষদে জমার কথা থাকলেও গত তিনবছরে তা করা হয়নি।
‘এ ছাড়া শিক্ষক পরিষদের সচিব নিয়োগ বা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষের একক ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তিনি হয়ত অধ্যক্ষের সঙ্গে আতাত করে নির্বাচন দিচ্ছে না।’
গনিত বিভাগের এক শিক্ষক জানান, ক্ষমতার মোহ পরে তিনি চেয়ার ছাড়তে চাচ্ছেন না। গত তিনবছরে ফরম ফিলাপসহ বিভিন্ন খাত থেকে তিনি বেশ আয় করেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক পরিষদের সচিব জাফর ইকবাল জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা বা দায়িত্ব হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।
তবে সদ্য যোগ দেয়া অধ্যক্ষের কাছে কমিটির মেয়াদউত্তীর্নের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত তিন বছরে কলেজের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন তিনি করতে পেরেছেন। এর মধ্যে কলেজের মাঠে প্রায় ২০ লাখ সিএফটি বালু ফেলে পুরো মাঠটি ভরাট করেছেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে ৩৮টি লাইটপোস্টে মোট ৪২টি বাতি লাগিয়ে গোটা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরালো করেছেন।
এ ছাড়া কলেজের পেছনের গেটটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কলেজের মধ্যে কয়েকটি রাস্তা, ভবন, পুরাণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন।
জাফর ইকবাল বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব বিস্তার হয়নি এ সময়ে। এসব অভিযোগ আসলে তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ।’
কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আমিন জানান, ‘অল্প কয়দিন আগে আমি যোগ দিয়েছি। শিক্ষক পরিষদের মেয়াদউত্তীর্নের বিষয়টি শুনেছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যেতে পারব।’