চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আইসিইউর বাইরে মায়ের সঙ্গে বসে আছে ঋদ্ধি। অপেক্ষা লাইফ সাপোর্টে থাকা বাবার জ্ঞান ফেরার।
মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে, কাঁদো গলায় মাকে বলছে, ‘বাপ্পি কী করে এখানে? তাকে নিয়ে যাও। তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে বলো। আমার চকলেট আনে না কেন?’
ঋদ্ধির কথা শুনে মুখ লুকান মা। তার চার বছর বয়সী একমাত্র এই সন্তানের এত প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই তার কাছে। ঋদ্ধির বাবার জ্ঞান কবে ফিরবে তার কোনো উত্তর নেই চিকিৎসকের কাছেও।
ঋদ্ধির বাবা রক্তিম শীল। ৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের মালুমঘাট ফকিরশাহ এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় পিকআপ ভ্যানের চাপায় মৃত্যু হয় তার ৫ ভাইয়ের। এ সময় আহত হন রক্তিম ও তার এক বোন।
ঘটনার পর চট্টগ্রামের এই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা চলছে তার। তবে এখন পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক হারুনুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রক্তিম শীলের এখন পর্যন্ত বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। দুর্ঘটনার পর থেকেই তার অবস্থা একই। একমাত্র উন্নতি বলা যেতে পারে তাকে এখন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা গেছে। তিনি বেঁচে আছেন।
‘তবে তার কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই, কোনো উন্নতির লক্ষণও নেই আপাতত। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু হতে পারে। লাইফ সাপোর্ট জিনিসটাই এমন। লাইফ সাপোর্ট না খোলা পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
আইসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে রক্তিম শীলের স্ত্রী শান্তা শীল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকায় ছোট্ট একটি মুদি দোকান ছিল আমাদের। এই দোকানের ওপর ভর করেই চলত সংসার। কিন্তু এখন তো দোকান বন্ধ। হাসপাতাল সরকারি হলেও এখানে থাকা খাওয়ার ব্যয়ভার আছে।
‘চিকিৎসকের দেয়া টেস্টগুলো বাইরে থেকে করতে হয়, এক একটি টেস্ট করতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লাগে। মানুষজন কিছুটা সাহায্য করছেন। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। কোথায় যাব, কী হবে- কোনো পথ দেখছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হঠাৎ কী হয় বুঝতেই পারছি না। সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে আমার। হয়তো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছি, জেগে উঠলেই কেটে যাবে এই দুঃস্বপ্ন। ডাক্তাররাও কিছু বলছেন না। এত এত টেস্ট করাচ্ছি, কোনো ভালো রেজাল্ট নেই। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে দুদিন সময় দিয়েছেন। ফিডব্যাক পেলে এর মধ্যেই পাব বলেছেন।’
চকোরিয়ায় দুর্ঘটনার পর রক্তিম শীলকে প্রথমে নেয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। কিন্তু আইসিইউ সংকট থাকায় বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল হয়ে আবার রোববার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে আসা হয় তাকে।