স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে স্থাপন করা শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হাত ধোয়ার প্রতিটি বেসিনই এখন অকেজো। বিকল হয়ে সেগুলো পড়ে আছে বিভিন্ন দপ্তর ও জনবহুল স্থানে। তাই আবর্জনাভরা বেসিনগুলো এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাত ধোয়ার উদ্যোগ নেয় শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর অংশ হিসেবে জেলার ২৮টি স্থানে বেসিন স্থাপন করে সংস্থাটি।
কিন্তু বেসিন ব্যবহারের জন্য স্থায়ীভাবে পানির লাইন স্থাপন না করায় অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেসিন স্থাপনের সময় অস্থায়ীভাবে পানির ব্যবস্থা করা হলেও কিছুদিন পর পানি সরবরাহ না থাকায় এগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
কেউ ব্যবহার না করায় বিভিন্ন সড়ক ও কার্যালয়ের সামনে বেসিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৮টি স্থানে ৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও আড়াই ফুট প্রস্থের বেসিন স্থাপন করা হয়। প্রতিটি স্থাপনে ব্যয় হয় ৩০ হাজার টাকা করে। এসব বেসিন ব্যবহারের জন্য দুটি করে কল রাখা হয়।
এ ছাড়া বেসিনের মেঝে ও দেয়ালে টাইলস বসানোসহ পানি নিষ্কাশনের জন্য পাশের নালায় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। যে কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বেসিন স্থাপন করা হয়েছে, সেখান থেকে পানি সরবরাহের লাইন দেয়া হয়। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেসিনগুলোতে পানির সংযোগ নেই। তাই এগুলো কেউ ব্যবহার করতে পারছে না।
সরেজমিনে জেলা শহরের চৌরঙ্গী, সদর হাসপাতাল, আদালত এলাকার পুলিশ বক্স, উপজেলা পরিষদ চত্বর, ভূমি অফিস চত্বরসহ অন্তত ১২টি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বেসিনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনোটার আশপাশে আবার মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করছে। কোনো কোনো বেসিনে কল নেই। প্রত্যেকটি বেসিনে পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
স্থায়ীভাবে পানির সংযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বেসিনগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে ফাস্ট ফুড দোকান মালিক হেমায়েত হোসেন জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর দোকানের কাছেই বেসিন থাকায় হাত ধোয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। এখন বেসিন আছে, তবে পানি নেই। তাই কেউ ব্যবহার করতে পারছে না।
শহরের ব্যবসায়ী শাহরিয়ার আহসান জানান, করোনার শুরুর দিকে বেসিনগুলোতে সব সময় লিকুইড সাবানসহ পানির সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। সংক্রমণের হার কমতে শুরু করলে এটি ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ কমে আসে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেসিনগুলো সচল করা হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানা এখনও সম্ভব।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল চত্বরের জরুরি বিভাগের দেয়াল ঘেঁষে বেসিন বসানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এর দুটি কলই বিকল। পানির সরবরাহ বন্ধ। এর ওপর জমে আছে ময়লার স্তূপ।
বিষয়টি জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘জনবল সংকটে রোগীদের সেবা দিতেই হিমশিম খাওয়ায় হাসপাতালের বাইরের বেসিনে নজরদারির সুযোগ নেই। তবে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি ব্যবহার উপযোগী করা হবে।’
শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, ‘আর্থিক সীমাবদ্ধতায় বেসিনে তখন স্থায়ী পানির সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এখন নির্দেশনা পেলেই এগুলো সংস্কার করে পুনরায় চালু করা হবে।’