চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে ক্ষতিকারক ডিডিটি কীটনাশক অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। সব কিছু ঠিক ৪/৫ সপ্তাহের মধ্যে বিপুল পরিমাণ কীটনাশক গুদাম থেকে নেয়া হবে বন্দরে।
এরপর জাহাজে করে তা নিয়ে যাওয়া হবে ফ্রান্সে। সেখানেই ধ্বংস করা হবে কীটনাশকের এ চালান।
৩৭ বছর আগে তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমাতে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়েছিল ৫০০ টন ডিডিটি (ডাইক্লোরো ডাফেনাইল ট্রাইক্লোরেথেন) পাউডার।
আমদানির ৪ বছরের মাথায় ১৯৮৯ সালে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক এ পাউডার নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর থেকে তা পড়ে ছিল চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের গুদামে।
দীর্ঘদিনের পুরনো বস্তা ফেটে গুদামের মেঝেতে পড়ে আছে কীটনাশক। ছবি:মো.রায়হান
তিন দশকেরও বেশি সময় গুদামে পড়ে থাকা এই কীটনাশক পর্যবেক্ষণ করেছে ১৫ সদস্যের একটি দল ।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সমন্বয়ে অপসারণ কাজটি করছে গ্রিসের প্রতিষ্ঠান ‘পলিইকো এসএ’।
চট্টগ্রামের গুদাম থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত কীটনাশক নিতে ব্যয় হবে ৭০ কোটি টাকা। যার পুরোটাই দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)।
২০০১ সালে বাংলাদেশ স্টকহোম কনভেনশনে সই করে। এই কনভেনশনে ডিডিটিসহ ক্ষতিকারক জৈব দূষণকারী কীটনাশক উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ বা সীমিতকরণ করা হয়। কনভেনশন অনুসরণ করেই অপসারণ করা হচ্ছে ৫০০ টন ডিডিটি।
‘পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় এসব কীটনাশক অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিডিটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সরাসরি এই কীটনাশকের সংস্পর্শে আসলে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি, রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসসহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।’
তিনি জানান, কীটনাশক ধ্বংস করার প্রক্রিয়া খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এই ক্ষতিকারক পদার্থ ধ্বংস করার জন্য শুধু ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশে প্ল্যান্ট রয়েছে।
আগ্রাবাদের গুদাম থেকে ডিডিটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে করে ফ্রান্সে পৌঁছানোর আগে ১২টি দেশের বন্দর ব্যবহার করবে। ক্ষতিকারক কীটনাশক বহনের জন্য দেশগুলো থেকে আগেই অনুমতি নিতে হবে। ১০টি দেশের অনুমতি মিলেছে। মরক্কো এবং মালয়েশিয়া থেকে অনুমতি পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে।
মূলত ২০০৭ সালে ‘পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অধীনে ডিডিটি ধ্বংস করার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ওই বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) একটি দল বাংলাদেশ এসে গুদাম পরিদর্শন করে চলে যায়। এর ৮ বছরের মাথায় দলটি আবারও এসে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশে এফএওর প্রতিনিধি মাইক রবসন কীটনাশক ধ্বংসে খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে পাকিস্তান থেকে ৫০০ টন ডিডিটির চালান আসে। এক্সচেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তা সরবরাহ করে। পরে ল্যাব পরীক্ষায় এগুলো নিম্নমানের বলে প্রমাণ মিলে। সে সময় সরবরাহকারীকে কীটনাশকের চালানটি ফেরত নিতে বলা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।