নীলফামারী সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে ১১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন একই ব্যক্তি। সবশেষ এখানে ভোট হয় ২০১১ সালের ৫ জুন। সে সময় নির্বাচিত হন বদিউজ্জামান প্রধান।
নীলফামারী পৌরসভার সঙ্গে সীমানা জটিলতায় ২০১৬ সাল থেকে আটকে আছে এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এ জন্য হতাশ ভোটার ও চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ভোট না হওয়ায় গণতান্ত্রিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জটিলতা এখন আর নেই। তাহলে কী কারণে ভোট হচ্ছে না তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে খোকশাবাড়ি, ইটাখোলা, কুন্দপুকুর ও টুপামারী ইউনিয়নের কিছু অংশ নীলফামারী পৌরসভায় সংযুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা হয়।
মামলা চলমান থাকায় ২০১৬ সালে ভোট হয়নি পৌরসভাসহ ওই ৪ ইউনিয়নে। এরপর সীমানা জটিলতা নিরসন হওয়ায় ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে পৌরসভা এবং তিন ইউনিয়নে ভোট হয়।
তবে এখনও খোকশাবাড়িতে ভোট হয়নি।
ইউনিয়নের রামকলা এলাকার সবজি বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, ‘সবখানে ভোট হইল, আমাদের ইউনিয়নে হচ্ছে না। মানুষ আশা নিয়ে আছে ভোট দিবে। গেল বারও ভোট হয়নি। এবারেও খবর নাই। ভোট আসলে ভালো-মন্দ আলোচনা হয়। এইটা জরুরি।’
কলেজছাত্র ফরিদুল ইসলাম জানান, ভোট হলে যিনি দায়িত্বে আছেন, তার কাজের পরিকল্পনা বাড়ে। নতুনদের মূল্যায়নের সুযোগ হয়। জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির জায়গাটাও তৈরি হয়।
নির্বাচন হলে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ে বলে মনে করেন সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তামবীর আলম সুমন।
তিনি বলেন, ‘মনে করেন, ভোট আসলে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ে, সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে তাদের দেখা যায়। অংশগ্রহণ বাড়ে। তাদের লক্ষ্য সেবা করা। এ জন্য বছরজুড়ে তাদের দেখা যায়। বিশেষ করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে।
‘নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক চর্চা ঠিক থাকে। পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারেন। যে নির্বাচিত আছেন তিনি ভালো কাজ করলে আবারও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকে, না হলে নতুন কেউ নির্বাচিত হতে পারেন।’
খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত রায় বলেন, ‘সেই ২০১১ সালে ভোট হয়েছে। মানুষ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।
‘নীলফামারী পৌরসভার সঙ্গে সীমানা জটিলতা ছিল। জটিলতা কেটে পৌরসভাসহ বাকি ৩ ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। কোন অদৃশ্য কারণে ভোট হচ্ছে না আমাদের জানা নেই।’
তিনি জানান, পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারছেন না এখানকার মানুষ। ইউনিয়নের উন্নয়নেরও ব্যাঘাত ঘটছে।
ভোট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামানও।
তিনি বলেন, ‘আমিও চাই দ্রুত নির্বাচন হোক। কেন নির্বাচন হচ্ছে না এটি নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে। কারণ পৌরসভার সীমানা জটিলতা মামলায় টুপামারী, কুন্দপুকুর ও ইটাখোলা উচ্চ আদালতে মামলা করেছিল। আমার ইউনিয়ন আপত্তি বা আদালতে যায়নি।
‘আর মানুষ যেভাবে ভোট চাচ্ছেন আমিও তাদের মতোই বলতে চাই, দ্রুত ভোট হওয়া দরকার।’
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাব উজ জামান বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে এখন আর কোনো বাধা নেই। হয়তো নির্বাচন কমিশনের তফসিল থেকে পিছিয়ে পড়েছে। আমরা বিষয়টি কমিশনের কাছে জানিয়েছি। দ্রুত হয়তো নির্বাচনের তফসিল হতে পারে।’