বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রওশন দম্পতির জন্য সব করবে সরকার

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২৩:০৬

ইউএনও মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘থাকার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি পাকা ঘর, শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশনের জন্য একটি হুইল চেয়ার, মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ একটি ভালো দোকান প্রয়োজন। আশা করছি, তারা সরকারিভাবে এসব সহযোগিতা পাবে।’

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সোহেল মিয়া ও প্রতিবন্ধী রওশন দম্পতির বাড়ি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

শারীরিক প্রতিবন্ধী স্ত্রীর সঙ্গে সোহেলের ১৫ বছরের সংসার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে এলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের খোঁজখবর নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

বুধবার সন্ধ্যায় ইউএনও নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ দম্পতির বিষয়টি জানতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সেখান থেকে জেলা প্রশাসক স্যারকে পরিবারটির খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

৬ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে রওশন আক্তারের দুই হাঁটুর নিচ থেকে অবশ হয়ে যায়। তখন থেকেই হাঁটাচলা প্রায় বন্ধ তার। দুই হাতে স্যান্ডেল পরে হামাগুড়ি দিয়ে কিছুটা চলতে পারেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারের লোকজন রওশনকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতেন না।

বিয়ের পর রওশনের কোথাও যেতে মন চাইলে স্বামী সোহেল মিয়াকে বলেন। সোহেল রওশনকে পিঠে নিয়ে রওনা দেন। এভাবেই চলছে তাদের ১৫ বছরের সংসার জীবন।

ইউএনও বলেন, ‘বুধবার দুপুরে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরিবারটি খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তবে, শত অভাব অনটনের মধ্যেও তাদের ভালোবাসা অটুট। চোখে-মুখে শান্তির ছাপ রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সহায়তা দেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘থাকার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি পাকা ঘর, শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশনের জন্য একটি হুইল চেয়ার, মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ একটি ভালো দোকান প্রয়োজন। আশা করছি তারা সরকারিভাবে এসব সহযোগিতা পাবে।’

সোহেল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অচল-অক্ষম একটা মেয়েকে অন্ধের মতো ভালোবেসেছি। সেও আমার প্রেমে অন্ধ। আমাদের প্রেম পবিত্র হওয়ায় ডালভাত খেয়ে এখনো সুখে আছি।

‘স্বাভাবিকভাবে একটি মেয়ে তার স্বামীর জন্য যতটুকু করে, রওশন তার চেয়েও বেশি কিছু করার চেষ্টা করে। আমি তাকে আজীবন এভাবেই ভালোবেসে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘আমার সংসারে অর্থবিত্ত নাই। মায়া-মহব্বত আছে। আমার চোখে রওশনের চেহারা খুব ভালো। আমার মেয়েটাও হয়েছে ফুটফুটে। সুখে-দুঃখে এভাবেই একসঙ্গে সারাজীবন কাটাতে চাই।’

স্বামীর পিঠে রওশন। ছবি: নিউজবাংলা

রওশন বলেন, ‘প্রথমদিকে সবাই বলাবলি করত সে (সোহেল) আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সোহেল আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। এই বিশ্বাসটাই আমি সোহেলের ওপর করতে পেরেছিলাম। সেজন্য সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার হাত ধরে আমি পালিয়ে যাই এবং বিয়ে করি। মেয়ে হওয়ার পর আমাদের ভালোবাসা যেন আরও বেড়ে গেছে।’

স্বামীর পিঠে চড়ে যাতায়াত করার বিষয়ে রওশন বললেন, ‘কখনো কোথাও যেতে চাইলে আমি একবার বললেই সে তার পিঠে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করে। আগে শুকনা ছিলাম। এখন কমপক্ষে ৫০ কেজি ওজন হয়েছে। স্বামী স্ট্রোক করেছেন ২০২০ সালে। ডাক্তার ভারী কিছু তুলতে নিষেধ করেছেন। এখন স্বামীর পিঠে চড়তে নিজেরই কষ্ট লাগে।

‘তবুও মাঝেমধ্যে ইচ্ছে না থাকলেও প্রয়োজনে পিঠে চড়তে হয়। এতে নিজের মনেই কষ্ট পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনের চাহিদা পূরণের জন্য সে তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে। তাকে ধন-সম্পদ কিছুই দিতে পারিনি, শুধু ভালোবাসাটুকুই দিয়েছি। আর সে আমার ভালোবাসা নিয়েই এখনো আমার সঙ্গে আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর