জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেও পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার শঙ্কায় পড়েছেন নীলফামারীর দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা মাসুম।
বিএম সাবাব ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ৫ ফেব্রুয়ারি মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দর্শন বিষয়ে পড়বেন তিনি।
মাসুদ নীলফামারী সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের রামকলা গ্রামের সবজি বিক্রেতা হোসেন আলীর ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মাসুদ সবার ছোট।
স্থানীয়রা জানান, অভাব-অনটনের কারণে হোসেন আলী পড়াশোনা করাতে পারেননি সন্তানদের। বড় সন্তানদের বিয়ে হওয়ায় সবার ছোট মাসুদ বিভিন্ন জনের সহায়তায় কোনো রকমে পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
কষ্টের মধ্যেও ছমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে মাসুদ।
বাবা হোসেন আলী বলেন, ‘অভাব-অনটনের কারণে চার সন্তানকে পড়াতে পারিনি। বড় দুই ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করে সংসার চালায়। মেয়ে দুটারও বিয়ে হয়েছে।
‘ছোট ছেলেটার পড়ালেখার খুব ইচ্ছে ছিল। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়েছি তার। এইচএসসি পাস করে মাসুদের ভর্তি হওয়া নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাত পড়ির চায়ছে ওইঠেকার (ওখানকার) থাকার খচর, পড়ার খরচ মুই কোনঠে পাইম। মোর শরীর চলে না কিডনির সমস্যা। মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকার ওষুধ খাবার নাগে।’
তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি ছেলেটার কোনো উপকার করিম (করতে) পান খুব ভালো হয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মাসুদ রানা মাসুম বলেন, ‘বাবা ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। ওই টাকা দিয়ে সংসার চলে। বাবাকে আমি সহায়তা করি বিভিন্ন সময়ে। মানুষের সহযোগিতায় এতদূর এসেছি। আমি যে আশা নিয়ে পড়াশোনা করছি আল্লাহ তা যেন পূরণ করেন।’
মাসুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে ভর্তির সুযোগ পেয়েও সেখানে যেতে পারিনি। এখন জগন্নাথে ভর্তি হয়েছি। ঢাকায় থাকা-খাওয়া খরচ অনেক। আমি কীভাবে ম্যানেজ করব মাথায় ঢুকছে না।’
‘কেউ যদি আমার পাশে দাঁড়াত আমি উপকৃত হতাম।’- যোগ করেন মাসুদ।
ছমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সত্যেন রায় বলেন, ‘সে স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম ছাত্র ছিল। অত্যন্ত মেধাবী। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় বরাবরই প্রথম হতো সে। তার পরিবার সম্বন্ধে আমি জানি। ফ্রিতে পড়েয়েছি। বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি।’
নবজীবন পথশিশু ফাউন্ডেশনের নীলফামারী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বুলেট বলেন, ‘দরিদ্র ঘরের সন্তান হয়েও পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে আমাদের সঙ্গে।
‘একজন সংগঠক হিসেবেও সে নিজেকে তৈরি করেছে। এ রকম ছেলেরা যেন নিভে না যায়। সে ভালো করবে। মানুষের উপকারে আসবে। আমি অনুরোধ করব যেন তাকে সহযোগিতা করা হয়, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে।’