গ্রাহকের কাছে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা বকেয়া। নানা পদক্ষেপ নিয়েও সেই টাকা আদায় করতে পারছে না হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। উল্টো বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সূত্র জানিয়েছে, হবিগঞ্জ সদর পৌরসভা ও আশপাশের এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে পিডিবি। এর মধ্যে ২১ হাজার গ্রাহক ব্যবহার করছেন প্রি-পেইড মিটার। বাকি ১৪ হাজার গ্রাহক পোস্টপেইডেইর আওতাধীন।
এই শাখার আওতায় প্রতি মাসে গড়ে ৪ কোটি টাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তবে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে পিডিবি’র বকেয়া পড়েছে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা।
এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের কাছে সাড়ে ১৫ কোটি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি আর ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি টাকা বকেয়া। বকেয়া থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকদের মধ্যে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাসহ জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
ইতোমধ্যে ৩০০ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে এর বিপরীতে মামলা দেয়া হয়েছে মাত্র আড়াই কোটি টাকার। আর অনেক চেষ্টার পর দেড় বছরে বকেয়া আদায় হয়েছে মাত্র ৭ কোটি টাকা। আর হদিস মিলছে না এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৭৮০ জন। তাদের কাছে বকেয়া প্রায় ৬ কোটি টাকা।
বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, বকেয়া আদায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও বকেয়া উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। দীর্ঘ সময় বিল বকেয়া থাকা গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
গত ২১ ডিসেম্বর শহরের জালালাবাদে এক গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে এমন হামলার মুখে পড়েন পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী চাঁদনি আক্তারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। জালালাবাদের গ্রাহক সামসু মিয়া ও তার আত্মীয়-স্বজনরা বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের মারধর করেন।
এ বিষয়ে চাঁদনি আক্তার বলেন, ‘অনেক গ্রাহক আছেন দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন। এসব বিল উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেও কাজ হচ্ছে না। বকেয়া আদায় বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে অনেক সময় গ্রাহকদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে আমাদের। এমনকি অনেক সময় ছুরি নিয়েও এগিয়ে আসেন অনেকে।’
পিডিবির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমাম হোসেন বলেন, ‘গ্রাহকদের কাছে পিডিবির সাড়ে ৩২ কোটি টাকা বকেয়া। এই টাকাটা আমরা তুলতে চাই। অথচ এর জন্য আমাদেরকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা চাই গ্রাহক আমাদেরকে সহযোগিতা করুক।’
এদিকে, বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের অভিযোগ- অবৈধ সংযোগ আর ভুতুড়ে বিলের কারণে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। এমনকি প্রি-পেইড গ্রাহকদেরও অনেক সময় ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বকেয়া বিল।
হবিগঞ্জ গ্রাহক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম শিবলী খান বলেন, ‘অনেক সময় মিটার ইউনিটের সঙ্গে বিলের ইউনিটের কোন মিল পাওয়া যায় না। বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানালে তারা সমাধান করে দেয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত দেন না। এ ছাড়া বর্তমানে যারা প্রি-পেইড গ্রাহক হয়েছে তাদেরকে পোস্ট-পেইড থাকাকালীন সব বিল পরিশোধ করেই প্রি-পেইড গ্রাহক হতে হয়েছে। অথচ ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রি-পেইড গ্রাহকদেরকে ৩/৪ বছর আগের বকেয়া বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, ‘বকেয়া বিল থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে বিদ্যুৎ বিভাগকে অবৈধ গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে হবে। আমার ধারণা অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে দিলে একটা টাকাও বকেয়া থাকবে না।’
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসার পর থেকে বকেয়ার পরিমাণ কমে আসছে। এ ছাড়া এখনও যেগুলো বকেয়া রয়েছে সেগুলো উত্তোলনের জন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’