ঠাকুরগাঁও সদরের ছোট একটি বাজার মথুরাপুর। স্থানীয় ছাড়া খুব একটা বাইরের মানুষের ভিড় দেখা যেত না এখানে। সেই বাজারই এখন বিকেল থেকে হয়ে উঠছে সরগরম।
স্থানীয়রা তো আসছেনই, অন্য জেলার মানুষও মথুরাপুর আসছেন কালাই রুটি খেতে।
১৫ দিন আগে মোহাম্মদ আবু ও আবু বক্কর নামে দুই ভাই কালাই রুটির দোকান দেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের দোকান বিসমিল্লাহ ফুডসের কালাই রুটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু হয় রুটি বানানো, চলে রাত পর্যন্ত। ক্রেতার ভিড় বাড়ায় বাড়াতে হয়েছে রুটি বানানোর চুলা।
আমি রাজশাহী থেকে বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছি। রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে এই রুটি খুবই জনপ্রিয়। ঠাকুরগাঁওয়ে কালাই রুটি এই প্রথম তৈরি হচ্ছে। তাই পরিবার নিয়ে এসেছি। এসে দেখি অনেক ভিড়। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর কালাই রুটি পেয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সানমুন মুস্তারি প্রথমবারের মতো কালাই রুটি খেয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এত দিন শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত কালাই রুটির নাম শুনেছি। কখনও খাওয়ার সুযোগ হয়নি। আজ প্রথম খেলাম। দারুণ সুস্বাদু খাবার। বাসার জন্যও পার্সেল নিয়ে নিয়েছি।’
শারমিন আক্তার বৃষ্টি বলেন, ‘আমি রাজশাহী থেকে বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছি। রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে এই রুটি খুবই জনপ্রিয়। ঠাকুরগাঁওয়ে কালাই রুটি এই প্রথম তৈরি হচ্ছে। তাই পরিবার নিয়ে এসেছি। এসে দেখি অনেক ভিড়। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর কালাই রুটি পেয়েছি।’
ঠাকুরগাঁওয়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৌহিদ সাফায়াত। ফেসবুকে এই দোকানের কালাই রুটির কথা দেখে তিনি বন্ধুদের নিয়ে খেতে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে নিজ জেলায় যাওয়া হয় না। তাই কালাই রুটিও খাওয়া হয় না। ঠাকুরগাঁও শহরেই ভাড়া থাকি। পাশেই কালাই রুটি বিক্রি হচ্ছে শুনে লোভ সামলাতে পারিনি। এখানে বিভিন্ন রকম ভর্তা দিয়ে রুটি খাওয়ার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।’
যেভাবে বানানো হয় কালাই রুটি
বিসমিল্লাহ ফুডসে কালাই রুটি বানান মোমেনা খাতুন। তিনি জানালেন এই রুটি বানানোর পুরো প্রক্রিয়া।
কালাই রুটি বানাতে লাগে মাষকলাইয়ের আটা, আতপ চালের গুঁড়া বা ময়দা, লবণ ও পানি।
প্রথমে মাষকলাই ও আতপ চাল পাটায় বা জাঁতায় পিষে আটা বানানো হয়। মেশিনের আটা দিয়েও রুটি বানানো যায়। তবে পাটায় বা জাঁতায় পেষা আটার রুটির স্বাদ বেশি।
আটার সঙ্গে স্বাদমতো লবণ ও পানি মিশিয়ে খামির তৈরি করা হয়। খামির থেকে অল্প করে আটা নিয়ে প্রথমে বলের আকার দেয়া হয়। এরপর দুই হাতের তালুর মাঝে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুটি বানানো হয়। এরপর তাওয়ায় সেঁকা হয়।
গমের বা চালের আটার রুটির চেয়ে কালাই রুটির আকারও বড়, পুরুত্বও বেশি। বাইরেরটা মচমচে, ভেতরে নরম।
এই দোকানের স্বত্বাধিকারী আবু বক্কর বলেন, ‘আমরা স্বাদ ও মান ঠিক রেখে কালাই রুটি বানাই। ছোট পরিসরে মাত্র ২ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করেছি। এখন ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের ভালো ভালো মন্তব্য আমাদের উৎসাহ বাড়াচ্ছে।
‘কালাই রুটির সঙ্গে বেগুন ভর্তা, শুকনা মরিচ ভর্তা, পেঁয়াজ ভর্তা দিচ্ছি। মূলধন কম থাকায় এখনও বট আর মাংস ভুনা চালু করতে পারিনি। আশা করছি, শিগগিরই এসব চালু করতে পারব।’
তার ভাই মোহাম্মদ আবু বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও সদরে আমরাই প্রথম কালাই রুটি বানানো শুরু করেছি। এর আগে এই শহরে এই খাবার কেউ বানায়নি। আমাদের উদ্যোগ যে এত জনপ্রিয়তা পাবে, তা কল্পনাও করিনি।’
এই উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু।