বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারি অ্যাপে মন্ত্রীর আত্মীয়ের ব্যবসা

  •    
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:৫৯

সরকারি অর্থে অ্যাপ কেনা মানে সেটি শতভাগ সরকারের সম্পত্তি। অথচ আইন অমান্য করে সরকারি এই অ্যাপের নাম এবং লোগো দিয়ে খোলা হয়েছে লিমিটেড কোম্পানি। নেপথ্যে থেকে এটি পরিচালনা করছেন নামির আহমেদ, যিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের শ্যালকের ছেলে।

সরকারের টাকায় কেনা ‘আমি প্রবাসী’ নামের অ্যাপ নিয়ে ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে। যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের আত্মীয়। আর যে অ্যাপ সেটিও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের।

সরকারি অর্থে অ্যাপ কেনা মানে সেটি শতভাগ সরকারের সম্পত্তি। অথচ আইন অমান্য করে সরকারি এই অ্যাপের নাম এবং লোগো দিয়ে খোলা হয়েছে লিমিটেড কোম্পানি। নেপথ্যে থেকে এটি পরিচালনা করছেন নামির আহমেদ। তবে নামির আহমেদের দাবি, সব নিয়ম-কানুন মেনেই তারা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ পরিচালনা করছেন। এটি কখনেই সরকারের কেনা অ্যাপ নয়।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি এই অ্যাপ নিয়ে ব্যবসা করা নামির আহমেদ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের শ্যালকের ছেলে। এই অ্যাপ কেনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সরবরাহের প্রতিটি ধাপেই যুক্ত নামির। তার কোম্পানি ‘বাংলা ট্রাক’-এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান থ্যান সিস্টেম থেকে অ্যাপটি কেনা হয়। সে সময় নামির আহমেদ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সভাতেও উপস্থিত ছিলেন।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রবাসী কর্মীদের সহজ তথ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ‘আমি প্রবাসী’ নামে একটি অ্যাপ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় থ্যান সিস্টেম নামের কোম্পানির কাছ থেকে অ্যাপটি কেনে মন্ত্রণালয়। এটি গত বছর ৮ মে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত অ্যাপ বুঝে নেয়নি মন্ত্রণালয়। এ কারণে সোর্স কোডসহ অ্যাপটির পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বেসরকারি ওই কোম্পানিটির হাতে। মন্ত্রণালয় মালিকানা বুঝে না নিয়ে উল্টো অ্যাপ পরিচালনার জন্য ওই কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি অর্থে অ্যাপ কেনার পর সেটি শতভাগ সরকারি সম্পত্তি। এ ক্ষেত্রে সরকারি সম্পত্তির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করাও বেআইনি। উপরন্তু এখন আবার অ্যাপ সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এতে বিএমইটিসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ চলে যাবে কোম্পানির হাতে। এই সুবাদে প্রবাসী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন, ট্রেনিং, প্রার্থী বাছাই, স্মার্টকার্ড প্রদান প্রভৃতি কাজ করতে পারবে কোম্পানি। এ জন্য বিভিন্ন হারে সার্ভিস চার্জ নেবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে প্রবাসী কর্মীদের নির্ধারিত সরকারি ফিয়ের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হবে। ফলে অভিবাসন ব্যয়ও বাড়বে।

অবশ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাও এই ব্যবসা অন্যের হাতে না দিতে এখন পর্যন্ত নথিতে কোনো আপত্তি জানাননি। ফলে মন্ত্রণালয় কোম্পানিটির সঙ্গে প্রথমে সমঝোতা স্মারক করেছে। এবার চুক্তি করতে সবকিছু চূড়ান্ত করেছে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে লাখো প্রবাসী ইতোমধ্যে অ্যাপের দিকে ঝুঁকছেন। ইতিমধ্যে ১১ লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী নিবন্ধন করেছেন এই অ্যাপে। ফলে প্রবাসীদের বিশাল তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারেরও আশঙ্কা রয়েছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় নামির আহমেদের সঙ্গে। গত ১ জুন ২০২০ তারিখে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব কাঞ্চন বিকাশ দত্ত স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে থ্যান সিস্টেম কর্তৃক ‘আমিই প্রবাসী’ অ্যাপ বিধি মোতাবেক প্রকিউর করার জন্য অনুমোদনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। চিঠিটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে নামির আহমেদের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা সঠিক না, এটা ছিল একটা ইনফরমেশন সার্ভিস কেনার কাগজ, “আমি প্রবাসী” অ্যাপ কেনার না। এই অ্যাপ ডেভেলপ থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা বা প্রস্তাবিত চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রতিটি পদক্ষেপই আইন মেনে হয়েছে।’

নামির আহমেদ আরও বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আমি বাংলা ট্রাকের কমিউনিকেশনের একজন নোমিনি পরিচালক। আর বাংলা ট্রাকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থ্যান সিস্টেম ও “আমিই প্রবাসী লিমিটেড”। “আমিই প্রবাসী” অ্যাপ মন্ত্রণালয় কখনেও কেনেনি। মন্ত্রণালয় ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা দিয়ে একটা ইনফরমেশন সার্ভিস কিনেছিল। আমরা সেটা সরবরাহ করেছি। পরে আমরাই “আমি প্রবাসী” অ্যাপ মন্ত্রণালয়কে প্রপোজ করেছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী আমার সম্পর্কে ফুফা হয়, এটা আমি কোথাও লুকাইনি। তবে এ সম্পর্কের কারণে আমি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অবৈধ সুবিধা নিইনি। আসলে আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। এখানে কিছু মানুষ চাচ্ছে এই ভালো কাজ যাতে না হয়। কারণ এটা হলে প্রবাসীরা উপকৃত হবে আর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ব্যাবসা হারাবে। তাই তারা এটার বিরুদ্ধে লেগেছে।’

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে, হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্ন লিখে উত্তর চাওয়া হয়েছে, তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর