বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিভে গেল বাংলা গানের সন্ধ্যা ‘প্রদীপও’

  •    
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:৪০

মধুমালতি ডাকে আয়, কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে, আমি তার ছলনায় ভুলব না, আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পানসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান শ্রোতারা শুনেছেন তার কণ্ঠে।

বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগের শিল্পীদের শেষ তারা নিভে গেল। মারা গেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ৯০ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

বর্ষীয়ান এ শিল্পী বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।

হেমন্ত, মান্না, শ্যামল, মানবেন্দ্ররা চলে গেছেন আগেই। এবার নিভে গেল সন্ধ্যাও।

মধুমালতি ডাকে আয়, কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে, আমি তার ছলনায় ভুলব না, আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পানসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান শ্রোতারা শুনেছেন তার কণ্ঠে। কলকাতা তো বটেই, বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছেও তুমুল জনপ্রিয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

গত ২৬ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্ধ্যা। পশ্চিমবঙ্গের এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সে সময় হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তার। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।

এরপর করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাকে এসএসকেএম থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি গণ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে গেয়েছিলেন একাধিক দেশাত্মবোধক গান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি উপলক্ষে তিনি গেয়েছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে।’ ১৯৭১ সালে ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে ঢাকায় বিদেশি সংগীতশিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বিবৃতিতে তারা প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

সন্ধ্যার শোকে মুহ্যমান বাঙালি। শিল্পী ঊষা উত্থুপ লিখেছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম উনি সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে তা হলো না।’ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া ‘গুরু বোনকে হারালাম।’

১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর কলকাতায় ঢাকুরিয়ায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম। বাবা নরেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মা হেম প্রভা দেবী। দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহে তারই হাত ধরে শাস্ত্রীয় সংগীত শিক্ষা মধ্য দিয়ে সঙ্গীত জীবনের পথচলার শুরু।

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানকে গুরু মানতেন। অধ্যাপক এটি ক্যানন, অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ি, পন্ডিত সন্তোষ কুমার বসুর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন সঙ্গীত চর্চা করার পর ১৯৫০ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মুম্বাই পাড়ি দেন। সেখানে দু বছরে ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। অনিল বিশ্বাসের হিন্দি ছবি তারানাতে তার প্রথম হিন্দি প্লেব্যাক। গোটা দেশে গান গেয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সাড়া ফেলে দেন।

তবে বেশিদিন মুম্বাই না থেকে ১৯৫২ সালে তিনি আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সালে কবি, গীতিকার শ্যামল গুপ্তর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

এরপর বাংলা সংগীত জগতে একের পর এক হিট গান দিতে থাকেন। ১৯৭১ সালে জয়জয়ন্তী এবং নিশিপদ্ম সিনেমার গান গেয়ে তিনি জাতীয় পুরস্কার পান গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করে। ২০২২ সালে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দিলে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, কেন এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলাম, তা বাংলা শ্রোতারা বুঝবেন।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৪৫ সালে কলম্বিয়া থেকে প্রথম গানের রেকর্ড করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৮ সালে রাইচাঁদ বড়ালের সংগীত পরিচালনায় প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। ছবির নাম অঞ্জনগড়।

৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আধুনিক বাংলা গান এবং ধ্রুপদ সঙ্গীতে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি শ্রোতাদের চিরকাল মুগ্ধ করবে।

শচীন দেব বর্মন, সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো দিকপাল সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

শচীন দেববর্মনের ডাকে মুম্বাই গিয়ে সঙ্গীত পরিচালক অনিল বিশ্বাসের সুরে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছিলেন সন্ধ্যা। সেই সূত্রে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তার।

অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের ঠোঁটে তার গাওয়া অসংখ্য গান শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়। এ শুধু গানের দিন এ লগন গান শোনাবার, এই পথ যদি না শেষ হয়, হয়তো কিছু নাহি পাবো, চম্পা চামেলী গোলাপেরই বাগে, গানে মোর ইন্দ্রধনু ইত্যাদি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বর্ণ কন্ঠে গাওয়া এই সমস্ত গান চিরকাল শ্রোতাদের কাছে অমলিন হয়ে থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর