বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের চাপ নেই বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে শিগগিরই একটি আবহ তৈরি হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
এর আগে সোমবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠক হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটিকে মন্ত্রণালয় জানায়, র্যাব এবং বাহিনীটির বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সেই চেষ্টা শুরু করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রমাগত চাপ’ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বৈঠকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) বাতিল করার পর সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়নি।
তবে মঙ্গলবার শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের ওপর থেকে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে বলে মনে করে ঢাকা। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদবির বা চেষ্টা চালানো হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটিকে চাপ বলব না। তবে এই নিয়ে তো অনেক কথাই হয়েছে। র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমাদের কাজ হলো, সামনের দিনে এ নিষেধাজ্ঞা কীভাবে তোলা যায় তা নিয়ে কাজ করা। সেই সঙ্গে আমরা নিশ্চিত করেছি এ নিষেধাজ্ঞা যেন আর না বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ভাষায় কথা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ হচ্ছে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সম্পর্ক রেখেছি এবং যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তার পরিপেক্ষিতে আগামী মার্চ, এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো হাই প্রোফাইল ভিজিট ও ডায়লগ আছে।
‘আমাদের এনগেজমেন্টের ভিত্তিগুলো আছে তার মধ্যে পার্টনারশিপ ডায়লগ, এনগেজমেন্ট ডায়লগ, সিকিউরিটি ডায়লগ, কম্পারেটিভ ডায়লগ- তা কয়েক দিন পরেই শুরু হবে। সেগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একটি আবহ তৈরি করবে। এ নিষেধাজ্ঞাগুলো তোলার জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া আছে, আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। সেগুলোই আমরা সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও কমিটিকে অবহিত করেছি। সেখানে চাপের কিছু নেই।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্মকর্তা বা কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়, তাহলে দেখবেন তারাও এই ভাষায় কথা বলছেন।’
সোমবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনো দ্বিপক্ষীয় সফর হয়নি। এ বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে শীর্ষ পর্যায়ের সফর আয়োজনে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তবে শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাই লেভেল সফর বা বৈঠক হয়নি, এটাও সঠিক নয়। কারণ সেদিনও জন কেরি বাংলাদেশে এসেছেন। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টও এক সময় ভাবা হতো।’
সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্র বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সরকারের অসন্তোষের কথা আমেরিকার সরকারকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
দেশটির সঙ্গে নানাভাবে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ও নিবিড় আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়; বরং মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা যথাযথ হয়নি।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আগেই সংসদীয় কমিটি লবিস্ট নিয়োগের কথা বলেছে। এর বাইরে সেটা নিয়ে কাজ চলছে। জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান (পিআর ফার্ম), আইনজীবী নিয়োগের কথাও মন্ত্রণালয় বলেছে।’
ফারুক খান আরও বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যা যা প্রয়োজন করতে বলেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যাতে আরও বর্ধিত না হয়, সেজন্য আমরা লিগালি মোকাবিলার জন্য এজেন্ট নিয়োগের চিন্তা করেছি। তারা আইনিভাবে বিষয়গুলো আমাদের হয়ে মোকাবিলা করবে।’
ফারুক খানের সভাপতিত্বে সোমবারের বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত এবং নাহিম রাজ্জাক অংশ নেন।