কালো টাকা নামে পরিচিত অপ্রদর্শিত আয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে সে বিনিয়োগের ৫ শতাংশ করে অর্থ সাদা করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ এসেছে। একই সঙ্গে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই এই বিনিয়োগ করার সুযোগ চাওয়া হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসই ও মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাব করেন।
তারা বলেছেন, এই সুযোগ অব্যাহত রাখলে পুঁজিবাজার চাঙা হবে, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি দেশ থেকে অর্থ পাচারও কমবে।
নানা পক্ষের বিরোধিতার মধ্যেও অপ্রদর্শিত আয় অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসতে সরকার প্রতি বছরই সাদা করার সুযোগ দেয়। গত বছর থেকে প্রযোজ্যহারের সঙ্গে ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে এই সুযোগ দেয়া হয়। নানা খাতের সঙ্গে পুঁজিবাজারেও এই বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে সেখানে অর্থের উৎস নিয়ে এবার প্রশ্ন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘প্রস্তাবিত আয়কর আইন-২০২২ এ পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলার বিধানটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, বিধানটি বলবৎ রাখা যেতে পারে।
‘কারণ, বিদ্যমান আইনের এই বিধান প্রস্তাবিত আয়কর আইনে অক্ষুণ্ন রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা তাদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে টাকা পাচারের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বলে মনে করি।’
আরও যা যা প্রস্তাব
এই বিষয়টির পাশাপাশি পুঁজিবাজার আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের পার্থক্য কমপক্ষে ১০ শতাংশ করা, এসএমই কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসা উৎসাহিত করতে কর ছাড় দেয়ার প্রস্তাবও করা হয়।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৩০ শতাংশ।
তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম ও তামাকজাত কোম্পানির কর হার এর বাইরে বিশেষভাবে নির্ধারিত।
ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার এম সাইফুর রহমান মজুমদার বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণে সব ধরনের বন্ডে অর্জিত সুদের ওপর প্রযোজ্য কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তালিকাভুক্ত শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিভেঞ্চারে বিনিয়োগ করা অর্থে কর রেয়াত, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ আয়করমুক্ত, করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানো, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর প্রস্তাবও করেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কাটার দাবি জানায়।
এছাড়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির করপোরেট কর হার ব্যাংক কোম্পানির সমান না রেখে নন লাইফ-বিমা কোম্পানির জন্য ৩৫ শতাংশ ও লাইফ বিমা কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়।
সেগুনবাগিচায় এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির সদস্য শুল্ক (নীতি) মাসুদ সাদিক।
তিনি বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার ফলে একদিকে নিয়মিত করদাতারা অসোন্তষ প্রকাশ করেন। নাগরিক সমাজও এর বিরোধিতা করে। অন্যদিকে পুঁজিবাজার বা ব্যবসায়ীদের কোনো কোনো পক্ষ এ সুবিধা চান। কিন্তু এনবিআর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে যারা সুবিধা চান তারা পাশে দাঁড়ান না। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরও ভাবতে হবে।’
এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।