ওষুধ এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির বিভিন্ন যৌগ নদীর পানিতে মেশার কারণে সারা বিশ্বের নদী মারাত্মক দূষণের মুখে পড়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের এক গবেষণায় পরিবেশের জন্য হুমকি এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী বড় পরিসরে এ গবেষণা করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ জার্নালে।
গবেষণার বরাতে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নদীর পানিতে পাওয়া গেছে প্যারাসিটামল, নিকোটিন, ক্যাফেইন, এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগ বিষয়ক এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়েছে, পাকিস্তান, বলিভিয়া এবং ইথিওপিয়ার নদীর পানি। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং অ্যামাজন রেইনফরেস্টের নদীর পানি।
নদীতে থাকা সাধারণ ফার্মাসিউটিক্যালের যৌগের প্রভাব সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি প্রতিষ্ঠিত যে, জন্মনিরোধক ব্যবস্থা পানিতে দ্রবীভূত হওয়ায় মাছের বৃদ্ধি ও প্রজনন ক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের এ গবেষণায় অন্তত ১০০ দেশ থেকে ১ হাজারের বেশি স্থান থেকে পানি নমুনা হিসেবে নেয়া হয়েছে।
দেখা গেছে, ২৫৮টি নদীর মধ্যে অন্তত এক চতুর্থাংশের পানিতে ‘সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান’ পাওয়া গেছে। এই মাত্রা জলজ প্রাণিদের জন্য অনিরাপদ।
এ গবেষণায় নেতৃত্বে থাকা ড. জন উইলকিনসন বলেন, ‘সাধারণত যা ঘটে তা হলো, আমরা এই রাসায়নিকগুলো গ্রহণ করি। সেগুলো আমাদের ওপর কাঙ্ক্ষিত কিছু প্রভাব ফেলে। পরে সেগুলো আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
‘তবে আমরা এখন যা জানি তা হলো নদীর পানিতে মেশার আগে সবচেয়ে আধুনিক ও দক্ষ বর্জ্য পানি শোধনাগারগুলোও এসব যৌগকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারে না।’
গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শনাক্ত করা হয়েছে এমন দুটি ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান হলো কারবামোজেপাইন এবং মেটফরমিন।
প্রথমটি মৃগী রোগী এবং স্নায়ু ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। আর দ্বিতীয়টি ব্যবহার করা হয় ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়।
ক্যাফেইন এবং নিকোটিনের পাশাপাশি ব্যথানাশক প্যারাসিটামলের মতো কথিত ‘লাইফস্টাইল কনজিউমেবলস’-এর উচ্চ ঘনত্ব নদীর পানিতে পাওয়া গেছে।
আফ্রিকায় ম্যালেরিয়াবিরোধী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর্টিমিসিনেন। সেখানকার পানিতে এই উপাদান উচ্চ মাত্রায় পাওয়া গেছে।
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের জলজ অর্থনীতিবিদ ড. ভেরোনিকা এডমন্ডস ব্রাউন বলেছেন, ‘নদীর পানিতে এসব ফার্মাসিউটিক্যালসের উপস্থিতি নেতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। এক্ষেত্রে খুব কমই গবেষণা হয়েছে।’