করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পিছিয়ে যাওয়া অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছে। ফাগুনের বিকেলগুলোতে আবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মেতে উঠবে লেখক-পাঠকের প্রাণের আড্ডায়।
ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সশরীরে মেলা চত্বরে উপস্থিত হতে পারেননি সরকারপ্রধান। তবে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলা এবার আমাদের একটু দেরিতে শুরু করতে হলো। প্রস্তুতি ছিল পয়লা ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো হঠাৎ করে আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। তাছাড়া ওমিক্রন নামে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট আসাতে এবং সেটা খুব বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তাই একটু দেরি করেই শুরু করতে হলো।’
সবার স্বাস্থ্যের কথা, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে উঠে আসে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থেকে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘এই মেলা হচ্ছে আমাদের প্রাণের মেলা। কোনো কারণে এই মেলাটা হতে না পারলে সবারই মন খারাপ হয়।’
দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে কবি, সাহিত্যিকদের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি এটুকুই বলব একটি জাতি সব সময় উন্নতি করতে পারে, যদি তার ভাষা-সংস্কৃতি উন্নতি হয়। আর আমাদের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সংস্কৃতিকর্মীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।’
ছাপা বইয়ের আবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বই না পড়লে মনে হয়, কী যেন হলো না। তবে এখন তো ডিজিটাল যুগ। কাজেই ডিজিটাল যুগে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে বই পড়ার চেয়ে একটি বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে উল্টে দেখাতে এবং পড়াতে অনেক বেশি আনন্দ।’
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় নির্ধারিত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে পারেনি লেখক-পাঠক-প্রকাশকের এই মিলনমেলা।
ভাষার মাসের ৩৮তম এই আয়োজন চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে এলে বাড়ানো হতে পারে সময়সীমা।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিসচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
এ সময় সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ১৫ জনের হাতে তুলে দেয়া হয় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পরই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় বইমেলা প্রাঙ্গণ আর বইপ্রেমী ও দর্শণার্থীদের পদচারণায় মেতে উঠে প্রাণের বইমেলা।
যারা পেলেন সাহিত্য পুরস্কার
কবিতায় আসাদ মান্নান, বিমল গুহ; কথাসাহিত্যে ঝর্ণা রহমান, বিশ্বজিৎ চৌধুরী; প্রবন্ধ/গবেষণায় হোসেনউদ্দীন হোসেন; অনুবাদে আমিনুর রহমান, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী; নাটকে সাধনা আহমেদ।
এ ছাড়া শিশুসাহিত্যে রফিকুর রশীদ; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় পান্না কায়সার; বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় হারুন-অর-রশিদ; বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে শুভাগত চৌধুরী; আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে সুফিয়া খাতুন ও হায়দার আকবর খান রনো এবং ফোকলোরে আমিনুর রহমান সুলতান এই সম্মাননা পেয়েছেন।
বইমেলার আদ্যোপান্ত
প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। তবে রাত ৮টার পর কেউ মেলায় ঢুকতে পারবেন না।
অবশ্য ছুটির দিনে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ মিলিয়ে মেলার মোট আয়তন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট। থাকছে ৩৫টি প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ১৪২টি স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৬৩৪টি স্টল। সব মিলিয়ে মেলায় অংশ নেয়া সংস্থার সংখ্যা ৫৩৪টি।
বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়াসহ সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। থাকবে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
উদ্বোধনের পরও অমর একুশে বইমেলার স্টলের কাজ নিয়ে চলছে ব্যস্ততা। ছবি:পিয়াস বিশ্বাস/ নিউজবাংলা
এবারও শিশুচত্বর থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিশু প্রহর উদযাপন নিয়ে শঙ্কা এখনও কাটেনি।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়ে উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মোট ১২৭টি লিটলম্যাগ পেয়েছে স্টল।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করবে।