ময়মনসিংহে মাছ, মাংস, সবজি, তেল, ডিমসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা।
ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার তদারকি না থাকার কারণেই দাম নিয়ন্ত্রণে নেই।
ময়মনসিংহ নগরের ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজারে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে গরু, খাসি, মুরগির মাংস ও ডিমের দাম। মাছের দামও বাড়তির দিকে।
শীতের সবজির মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় সবজিও চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারের মাছ বিক্রেতা হাসেম মিয়া জানান মাছের দাম। সব মাছের দামই গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি।
মুদি দোকানদার মো. ফয়সাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বোতলের সয়াবিন বিক্রি করতেছি ১৭২ টাকায়, খোলাটা ১৭০ টাকায়। পাম আর কোয়ালিটি প্রতি কেজির দাম ১৬০ টাকা।’
এ ছাড়া খোলা আটা প্রতি কেজি ৩৫ টাকায়, প্যাকেট আটা ৪০ টাকায়, ছোলা ৭৫ টাকায়, খেসারি ৮০ টাকায়, মটর ডাল ১২০ টাকায়, মুগডাল ১৪০ টাকায়, ভাঙা মাষকলাই ১৩০ টাকায়, মাষকলাই ৯০ টাকায়, বুটের ডাল ৮০ টাকায়, অ্যাংকর ৫০ টাকায়, দেশি মসুর ১২০ টাকায়, চিনি ৮০ টাকায়, ভারতের আদা ৮৫ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ৩২ টাকায়, দেশি আলু ২০ টাকায়, হল্যান্ড আলু ১৫ টাকায়, দেশি রসুন ৪৫ টাকায় ও ভারতের রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এখন প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬২০ টাকা। খাসির মাংস ৯০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৫০ টাকা ও সোনালির দাম প্রতি কেজি ২৬০ টাকা।
দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম প্রতি হালি ৬০ টাকায় এবং ফার্মের মুরগির ডিম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা জালাল জানান, শীতের প্রায় সব সবজির মৌসুম এখন শেষের দিকে। তাই বাজারে সরবরাহ কমতে থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়া লেবু ২০ টাকা হালি, কাঁচকলা ৩০ টাকা হালি ও দেশি লাউ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি কিনতে কিনতে মো. আসাদ বলেন, ‘সবাই নিজের পকেট ভারী করতেই ব্যস্ত। আমাদের মতো মধ্যম আয়ের লোকজন কীভাবে সংসার চালাচ্ছে সেটা কারও দেখার বিষয় না। আগে ৫০০ টাকায় তরি-তরকারিসহ সব কিছু কিনে বাড়ি যাওয়া যেত।
‘এখন মাছ আর সবজি কিনতেই এই টাকা শেষ। পেঁয়াজ, রসুন, তেল কেনার টাকা থাকে না।’
আসাদ আরও বলেন, ‘বাজারে প্রশাসনের তদারকি খুব কম৷ এ জন্য বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। সামান্য বেতনে চাকরি করি। বাজার করেই যদি সব টাকা খরচ হয়, তাহলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাব কীভাবে? বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’
বৃদ্ধ আবুল হাশেম বলেন, ‘আমার ছেড়া (ছেলে) টাঙ্গাইলে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে। সে হগল (প্রতি) মাসে ৫ হাজার ট্যাহা (টাকা) খরচ পাঠায়। এই ট্যাহা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতেই শেষ। আমরা গরিবরা বাজারে আইলে মাথা ঘুরে।’
বাজার দরের বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান জানান, সারা দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব ময়মনসিংহেও পড়েছে। তবে এখানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।
ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটর করা হচ্ছে। কেনা দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির প্রমাণ মিললে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’