ভালোবাসা দিবসে জীবিকার জন্য দোকানঘর উপহার পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখলেন সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো মিজান তালুকদার।
উপার্জন করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মিজানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ফরিদপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা করবো জয়’। সংগঠনটি মিজানের বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান গড়ে দিয়েছে।
সোমবার ভালোবাসা দিবসের সন্ধ্যায় দোকান উদ্বোধন করে পুনরায় সংসারের হাল ধরতে পেরে খুব খুশি মিজান।
ফরিদপুর শহরের উত্তর আলীপুর রেললাইনের পাশে রেজাউল করিম তালুকদারের বড় ছেলে মিজান তালুকদার। ৩২ বছরের মিজানের দুই মেয়ে ৮ বছরের মিম আক্তার ও ৬ বছরের লামিয়া আক্তার।
পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন তিনি। ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ সংকুলান করতে না পেরে একদিন মিনি পিকআপের হেলপারি করতে বাড়ি থেকে বের হন।
মিজান তালুকদার জানান, গত অক্টোবর মাসের ২ তারিখ হেলপারির প্রথম দিন সন্ধ্যায় ফরিদপুরের কানাইপুর বাজার থেকে মিনি পিকআপে পান লোড করে যশোরের উদ্দেশে রওনা হন।
রাত ২টার দিকে যশোরের চৌরাশ এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন পিকআপচালক মো. সোহেল ও মিজান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট এবং ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেবা নেন মিজান।
প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করার পরও তার বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। তখন থেকে শুরু হয় তার পঙ্গু জীবন।
উপহারের দোকানেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন মিজান তালুকদার। ছবি: নিউজবাংলাতিনি জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে নিয়ে অভাবের সংসারে শুরু হয় সংগ্রাম। অভাবের তাড়নায় রাতে দুচোখ এক হয় না তার। প্রতিদিন ৮০০ টাকার ওষুধ খেতে হয় তাকে।
এ সময় ‘আমরা করবো জয়’ সংগঠনের সভাপতি আহমেদ সৌরভ ছুটে যান মিজানের বাড়িতে। তার প্রয়োজনের কথা শোনেন। একটি দোকানঘর হলে তিনি কিছুটা স্বস্তিতে জীবন পার করতে পারবেন বলে জানান।
এরপর আহমেদ সৌরভ দোকানঘর নির্মাণে অর্থসহায়তা দেয়া শুরু করলে আমেরিকা প্রবাসী ব্যবসায়ী গোলাম সামদানী খান ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেন। শুরু হয় নির্মাণকাজ। টিন, কাঠ, বালু আর সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে বাড়ির সামনেই রাস্তার পাশে দোকান নির্মাণ করা হয়। কিনে দেয়া হয় দোকানের মালামাল।
সংগঠনের সভাপতি আহমেদ সৌরভ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়াই। মিজান ভাই আত্মনির্ভরশীল মানুষ। আমরা তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আনন্দিত।’
মিজান তালুকদার বলেন, ‘দুর্ঘটনা আমার জীবনকে অসহায় করে তুলেছিল। আমার থমকে যাওয়া জীবনকে আবার গতিশীল করে আমরা করবো জয় সংগঠনটি। তাদের মঙ্গল কামনা করি।’
সমাজসেবক কাজী গোলাম মহিউদ্দিন তসলিম বলেন, ‘মিজানের জন্য বিনা মূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করে দেব।’
এ ঘটনায় স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামছুল আরেফিন সাগর বলেন, ‘মিজানকে এরই মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি।’