স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা দূর হলো তামান্না আক্তার নূরার। এক পায়ে লিখে জেএসসি ও এসএসসির পর এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পাওয়া এই মেধাবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে কথা বলেছেন তামান্নার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় আলাদ দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে দুই বোন কথা বলেন। তারা আশ্বাস দেন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে সহায়তার।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না আক্তার নূরা। তিনি ঝিকরগাছার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশ হওয়া ফলে বরাবরের মতোই মিলেছে মেধার স্বাক্ষর। জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন তিনি।
এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ ফল লাভ করেন।
তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (নন-এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তামান্নার ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লাহ তাজ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে।
নানা বাধায় জড়িয়ে থাকা তামান্নার জীবনে সোমবার আসে সৌভাগ্যের দিন হয়ে। তিনি পড়ার টেবিলে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিট। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মমতামাখা এক নারী বলে উঠলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি?’
ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে তামান্নার কাছে পুরো বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করেছেন! ঘোর লাগা অবস্থায় তামান্না কথা বলতে পারছিলেন না। আবেগের চাপ সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেলেন। তামান্নার সেই কান্নার সাক্ষী হয় গোটা পরিবার।
একপর্যায়ে কান্না থামাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং নিজের স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান।
প্রধানমন্ত্রী তামান্নার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তাকে সব সহযোগিতা দেবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
টানা চার মিনিটের কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে সাহস হারাতে মানা করেন। সাহস আর মনোবল থাকলে তামান্না অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের নারী কণ্ঠ বলেন, ‘আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহানা বলছি। আমি কি তামান্না নূরার সঙ্গে কথা বলছি?’
শেখ রেহানার ফোন পেয়ে তখনও কেঁদে ফেলেন তামান্না। কান্না থামাতে বলে শেখ রেহানা বলেন, ‘কেঁদো না। টানা ভালো ফল করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমার সহযোগিতা করে যাব। যারা সাহস রেখে চলে তাঁরা কখনো হেরে যায় না।’
জাতির পিতার দুই কন্যার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি তামান্না। অভিব্যক্তি জানিয়ে বলেন, ‘প্রথমে দুজনের সঙ্গে কথা বলতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্রবল মধুর আবেগে কাঁপছিল আমার ভেতরটা। মনে হচ্ছে আমার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস। সেই অনুভূতি কাউকে বোঝাতে পারব না।
‘আমি এতটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে হাসতে পারিনি, কেঁদে ফেলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে আমার জীবনের গল্প শোনাতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে নিয়মিত ভালোভাবে লেখাপড়া এবং নিজের যত্ন নিতে বলেছেন।’
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লিখেছে তামান্না নূরা। ওর লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তারপর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেয়া হয় ওই চিঠির সঙ্গে। পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম দয়ায় তামান্নার সঙ্গে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা কথা বলেছেন। আশা করি, সবার দোয়ায় তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হবে।’
জন্ম থেকেই দুই হাত ও এক পা নেই তামান্না আক্তার নুরার। তবে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তাকে পড়ালেখায় থামিয়ে রাখতে পারেনি।