নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সার্চ কমিটিতে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে তারা এই দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নন।
সার্চ কমিটিতে জমা পড়া নাম প্রকাশ করার পর নিউজবাংলা ১১ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। এদের মধ্যে একজন মন্তব্য করতে রাজি হননি, এখনই সিদ্ধান্ত দিতে চান না চারজন, দুইজন বলেছেন তারা বেশ আগ্রহী। বাকি চারজন সরাসরি ‘না’ করেছেন।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে নির্বাচন কমিশন হবে, সেটি গঠনে তৃতীয়বারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাবের জন্য এই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছে নাম চেয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে যারা আগ্রহী তাদেরকেও নাম প্রস্তাব করার সুযোগ দেয়া হয়।
গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত নাম দেয়ার সুযোগ ছিল। পরে যেসব দল নাম জমা দেয়নি, তাদেরকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত নাম জমা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
এরপর রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রকাশ করে ৩২২ জনের নাম।
তাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সরকারের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক সেনাপ্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার।
যারা আগ্রহী
প্রস্তাবিত নামের তালিকায় থাকা দুই উপাচার্যের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করা নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ জানিয়েছেন, গতবারও তিনি আশা করেছিলেন কমিশনে স্থান পাবেন। এবার রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব দিলে তিনি আনন্দের সঙ্গেই তা গ্রহণ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের এই অধ্যাপক নির্বাচন নিয়ে কাজ করেন আগে থেকেই। তিনি জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন যেটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সুশাসন নিয়েও কাজ করে।
নিউজবাংলাকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, ‘গতবার আমার নাম ১০ জনের তালিকায় ছিল। তবে তখনও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পাইনি বলে দ্বিধান্বিত ছিলাম। পরে যেহেতু আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছি, তাই এবার আমার মধ্যে দ্বিধা নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি আমাকে নিয়োগ দেন তাহলে আমি নিশ্চয় গ্রহণ করব।’
তার মতে, এই দায়িত্বের জন্য তিনি খুবই দক্ষ। তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশে গত ৩০ বছর ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা তা জাতির এই ক্রান্তিকালে কাজে লাগাতে চাই।’
সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথম যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিশনের কমিশনার আবদুল মোবারক আবার কমিশনে যেতে আগ্রহী।
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনা করা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করেছিল।
নিউজবাংলাকে মোবারক বলেন, ‘যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে দায়িত্ব দেন, আমি অবশ্যই সেই দায়িত্ব নেব। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
যাদের ‘না’
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে সার্চ কমিটিতে নাম জমা পড়লেও সাংবিধানিক পদ নিয়ে নির্বাচন ভবনে যেতে চান না আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যারা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে আমি সেখানে যেতে চাই না।’
নির্বাচনে ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে সোচ্চার ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের অবস্থানও বিচারপতি মানিকের মতোই।
সার্চ কমিটি যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছে তাদের মধ্যে বদিউল আলম মজুমদারও ছিলেন। তিনিই কমিটির কাছে জমা পড়া নাম প্রকাশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসা এই এনজিও কর্মী বলেন, ‘আমি তো ওনাদেরকে (সার্চ কমিটি) লিখিতভাবেই জানিয়ে দিয়েছি যে আমি আগ্রহী নই।’
তবে বরাবর নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে আসা এই নির্বাচন বিশ্লেষক কী কারণে এই দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন, সেটা জানাননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘যিনি বা যারা আমার নাম দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি না।’
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামও দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকতাই আমার পেশা। এ পেশা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাই না।’
এখনই মন্তব্য নয়
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের প্রতিক্রিয়া ছিল এমন: ‘জানি না কে আমার নাম প্রস্তাব করেছে। আমি এগুলো নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না।’
বিষয়টি নিয়ে কৌশলী উত্তর দেন সাবেক তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, ‘যারা আমার নাম দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে এমন দায়িত্ব যদি আমাকে দেয়া হয়, নিশ্চয়ই তার আগে আমার সঙ্গে কথা বলে নেবেন। তাই আমি এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন করা সাবেক চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার আগে ভালোভাবে বুঝে নিতে চান।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না। এটা আমার নিজের বুঝতে হবে, তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারব এবং আপনাদের জানাতে পারব।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে চাই না। এ বিষয়ে এখনই কথা বলা ঠিক হবে না।’
কথা বলতে আগ্রহী নন তিনি
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি শাসনামলের পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়েছিল, তার উপদেষ্টা পদ নেয়ার পর পদত্যাগ করা মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের নামও রয়েছে সার্চ কমিটিতে জমা পড়া তালিকায়। তবে তিনি নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী কি না, এই বিষয়টি জানা গেল না কথা বলতে আগ্রহী না হওয়ায়।