প্রায় এক মাস ধরে দেশে করোনার শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের উপরে। এর মাঝেই মিলেমিশে এক হয়ে এসেছে বসন্ত এবং ভালোবাসা দিবস। করোনার এমন চোখ রাঙানিতেও ফিকে হয়ে যায়নি তারুণ্যের ভালোবাসা উদযাপন।
ভালোবাসতে কোনো দিন না লাগলেও সবাই একটি বিশেষ দিন চায়, যেদিন শুধুই ভালোবাসার মানুষটির জন্য বরাদ্দ থাকবে। গেল বছর করোনার কারণে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ঘটা করে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে পারেনি নগরবাসী।
সেই আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুচেছে এবার। বিধিনিষেধে কিছুটা শিথিলতা থাকায় সকাল থেকেই প্রিয়জনকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, বটতলা, কার্জন হল, শ্যাডো, হাকিম চত্বর ঘুরে মনে হয়েছে, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি- এ সুরে কাছে দূরে জলে-স্থলে বাজায় বাঁশি...’। কবিগুরুর এ গানের সুর যেন নতুন করে ঢেউ তুলেছে তারুণ্যে মনে।
ছেলেদের গায়ে পাঞ্জাবি, মেয়েদের রঙিন শাড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা, হাতে হাতে লাল টকটকে গোলাপ। অনেক অভিভাবক শিশুদের বাসন্তি শাড়ি পরিয়ে মাথায় ফুল গুঁজে দেন, হাতে পরান চুড়ি। সবমিলিয়ে পুরো ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে ভালোবাসার মঞ্চ।
বসন্তের ফুরফুরে হাওয়া সবার হৃদয়ে জাগিয়েছে ভালোবাসার পরশ। সে সঙ্গে মানব মনকে করে তুলেছে আবেগী। আবেগী মন নিয়ে প্রিয়জনের হাতে গোলাপ কিংবা সামান্য উপহার দিয়ে জানান দিয়েছে ভালোবাসার। একইসঙ্গে চলেছে মোবাইল ফোন সেটে সেলফি তোলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণে বসে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের হাতে হাত রেখে বুনেছে ভবিষ্যতের সোনালি স্বপ্ন। চোখে চোখ রেখে বলেছে- এ জীবন তোমারি তরে। কেউবা প্রিয়জনকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেয়েছে- এ পথ যদি না শেষ হয়...
দু’বছর ধরে সম্পর্ক গড়েছেন তানহা ও রিফাত। দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
তানহা বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এ দিনটি খুব ভালোভাবে উদযাপন করতে পারিনি। এবার সুযোগ হয়েছে।’
স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে নিয়ে বটতলায় বসে আছেন খাইরুল। বললেন, ‘ক্যাম্পাসে যখন ছিলাম তখন থেকেই আমাদের প্রেমের সম্পর্ক। সে সময় একসঙ্গে এই ক্যাম্পাসে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করেছি। এবারও সুযোগ পেয়ে দিনটি উদযাপন করতে এখানে চলে এসেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরই একদল আবার প্রেম ভালোবাসাকে ‘পুঁজিবাদী প্রেম’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তাদের দাবি, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন না করে সিঙ্গেল দিবস ঘোষণা করা হোক।
ভালোবাসা দিবস ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও নিয়মিত ফুল বিক্রেতাদের পাশাপাশি ফুল বিক্রিতে নেমেছে মৌসুমী হকাররা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীও নেমে পড়েন ফুল বিক্রি করতে।
আনিস নামের এক ফুল বিক্রেতা বলেন, ‘১২ হাজার টাকার ফুল এনেছি। অন্যান্য দিন একটা গোলাপ ফুল বিশ/ত্রিশ টাকায় বিক্রি হলেও আজ একটু বেশি নিচ্ছি। গড়ে ৬০ টাকা করে বিক্রি করছি।’
দুপুরে 'লাভ ফর অল' টি-শার্ট পরে হাতে গোলাপ নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়ান এভারগ্রিন জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
সংগঠনটির একজন সদস্য বলেন, ভালোবাসা হোক সবার জন্য। বাবা-মা, ভাই-বোন, প্রিয়জন থেকে শুরু করে দিনমজুর-কৃষক সবার জন্যই। ভালোবাসা দিবসটি যে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য নয়, সেটি বোঝাতেই আমরা ২০১৬ সাল থেকে সমমনাদের নিয়ে দিবসটিতে এই স্থানে দাঁড়াই।’
এছাড়া বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির উদ্যোগে টিএসসির পায়রা চত্বরে বিশেষ প্রেম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের বিষয়- আকাশেতে লক্ষ তারা, কালের স্রোতে আমরাই সেরা।
এই বিতর্কে শাশ্বত প্রেমের প্রতিনিধি হয়ে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উত্তম ও নিবেদিতা। অসম প্রেমের প্রতিনিধি সাচ্চু ও মিশমা, করপোরেট প্রেমের প্রতিনিধি হন অন্তরা ও রোমান। আর সার্বজনীন সিঙ্গেল পরিষদের প্রতিনিধি হন নোমান সোমন ও তন্বী।