নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে জমা পড়া নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিন জন সাবেক উপদেষ্টা, দুই জন সাবেক প্রধান বিচারপতি।
নির্বাচন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ করতে সোচ্চার ব্যক্তি, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ, সাবেক প্রধান সেনাপতি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, সাবেক আমলাদের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার রাতে বহুল আলোচিত এই নামগুলো প্রকাশ করা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে।
এরই মধ্যে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। পরের যে নির্বাচন কমিশন আসবে, তারাই আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবে।
গত দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মতভিন্নতার মধ্যে এবারের নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে আগের দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশগ্রহণ থাকলেও এবার বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জনের পাশাপাশি সার্চ কমিটিতে কোনো নামও জমা দেয়নি।
তার পরেও তিন শতাধিক নাম জমা পড়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে পরামর্শ আসার পর যেসব রাজনৈতিক দল নাম দেয়নি, তাদেরকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত সুযোগ করে দেয়া হয়। বিএনপি ও সমমনারা তবু কোনো নাম জমা দেয়নি।
বিশিষ্টজনদের পরামর্শেই এই নামগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। তবে জমা পড়া এই নামগুলো থেকেই রাষ্ট্রপতির কাছে তালিকা দেয়া হবে, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা নেই। তারা কেবল পরামর্শ চেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যাদের নাম
দুই জন সাবেক প্রধান বিচারপতির নামও আছে এই তালিকায়। এরা হলেন সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে আছেন আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী, নাজমুন আরা সুলতানা।
তবে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নির্বাচন কমিশনে যেতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘যারা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে আমি সেখানে যেতে চাই না।’
যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিন জন ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। এরা হলেন: গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধুরী।
তিন জন আছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার। এরা হলেন: এম সাখাওয়াত হোসেন, ছহুল হোসাইন ও মোবারক হোসেন।
শিক্ষাবিদদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতার নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।
নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি আমাকে নিয়োগ দেন তাহলে আমি নিশ্চয় গ্রহণ করব। দেশে বিদেশে গত ৩০ বছর ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা তা জাতির এই ক্রান্তিকালে কাজে লাগাব।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিমের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, এনজিও কর্মী বদিউল আলম মজুমদারকেও নির্বাচন কমিশনে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো উনাদের লিখিতভাবেই জানিয়ে দিয়েছি, আমি আগ্রহী নই।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা, সাবেক আমলা আবু আলম শহীদ খান, ২০০৬ সালে ভেজালবিরোধী অভিযানের সময় আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট (যিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া) রোকন উদ-দৌলার নামও প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অব) ইকবাল করিম ভূঁইয়া, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের নামও আছে।
তিন জন বিশিষ্ট সাংবাদিকের নামও আছে তালিকায়। এরা হলেন অজয় দাসগুপ্ত, ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও আবু সাঈদ খান।
আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের নামও রয়েছে সার্চ কমিটির প্রকাশ করা তালিকায়।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের চেয়ারম্যান সাবেক চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকেও নির্বাচন কমিশনে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।