বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এটা লাউ না বেগুন’

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:৩৯

জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আব্দুর রহিম জানান, বারি-১২ জাতের বেগুনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি আকারে অনেক বড়। দেখতে অনেকটা লাউয়ের মতো। দুটি বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটিতে এক কেজি ওজনের হয়ে থাকে।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ। কিন্তু কাছে গেল ভুল ভাঙে। মাঝারি আকারের লাউয়ের মতো সবজিটি অতি পরিচিত বেগুন। জাতের নাম বারি-১২।প্রথমবারের মতো বারি-১২ জাতের বেগুন বগুড়ায় চাষ করেছেন আহসানুল কবির ডালিম নামে এক কৃষক। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে এরই মধ্যে সফলতা পেয়েছেন তিনি।সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের ডালিম বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন। তবে উদ্যান ও সাথি ফসলের প্রতি তার আগ্রহ বেশি। এই সাথি ফসলের খোঁজ করতে গিয়ে দেশীয় বারি-১২ জাতের বেগুনের সন্ধান পান তিনি।

ডালিম জানান, দেশীয় রাখাইন জাতের এই বারি-১২ বেগুন। এবার পরীক্ষামূলকভাবে এই বেগুনের চাষ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সফলতা পাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।দেশি জাতের উচ্চফলনশীল এই বেগুন চাষে কষ্ট কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি বলে জানান তিনি।গত বছরের আগস্টে পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে বারি-১২ জাতের বেগুনের বীজ সংগ্রহ করেন ডালিম। সেখান থেকে প্রায় এক হাজার চারা উৎপাদন করা হয়।ডালিম বলেন, ‘দুটি জমিতে বারি-১২ বেগুন চাষ করি। একটিতে আম, বরই ও পিঁয়াজের সাথি ফসল হিসেবে অন্যটিতে শুধু বেগুনটি আবাদ করা হয়।’ডালিম আরও বলেন, ‘জমি থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত বেগুন পেয়েছি। গাছে থাকলে এই ওজন আরও বেশি হতো। এখনও কয়েকটি আছে বীজের জন্য। এগুলোর ওজন আরও বেশি হতে পারে।’বেগুনের মাঠ দেখতে ওই যশোপাড়া গ্রামে যাওয়া হয়। শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এই এলাকা। সবজি চাষের জন্য খ্যাতি আছে এই এলাকার।মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পিঁয়াজ ও আমের বাগানে বেশ কয়েকটি বেগুনগাছ। প্রায় গাছে ধরে আছে সবুজ রঙের বেগুন। বড় সাইজের একেকটি দেখে মনে হবে মাঝারি আকারের লাউ।পাশের আরেকটি জমিতে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ বেগুন তোলা হয়েছে। এখনও বড় আকারের কিছু বেগুন রয়েছে গাছে। তবে এসব বেশি বড় না।এই জমির বেগুন নিয়মিত বাজারে বিক্রি করা হয়ছে বলে জানান জমির পরিচর্যাকারী বিপ্লব। তিনি জানান, এই বেগুন চাষ করার সময় পুরোটাই জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কীটনাশকও দেয়া হয়নি। চার মাস ধরে বেগুনগাছ জমিতে রয়েছে। কোনো পোকামাকড় গাছের ক্ষতি করতে পারেনি।উদ্যোক্তা ডালিম বলেন, ‘বারি-১২ বেগুনটি চাষের সময় কোনো রাসায়নিক সার বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। কারণ আমাদের আবহাওয়ায় এর কেমন ফল পাওয়া যায় তা দেখা দরকার। ফলন অত্যন্ত ভালো পাওয়া গেছে।’

ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিক মো. সেকেন্দার

ফলন নিয়ে তিনি জানান, ২০ শতক জমি থেকে প্রায় ২৫ মণ বেগুন উৎপাদন হয়েছে। গড়ে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় এসব বেগুন বিক্রি করা হয়। এখন আর কোনো বেগুন তোলা হচ্ছে না।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আহসানুল কবির ডালিম বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় প্রায় ২০ বছরে কোনো বেগুনের আবাদ হয়নি। আমি আবার সেটি শুরু করতে চাই।’তিনি বলেন, ‘আমি আপাতত এই বেগুন থেকে বীজ করছি। এসব বীজ কৃষকদের বিনা মূল্যে বিতরণ করব। নতুন জাতটির চাষে সম্প্রসারণ ঘটাব।’বারি-১২ বেগুন নিয়ে কথা হয় বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সম্প্রতি এক পরিদর্শনে তারা বেগুনের নতুন এ জাতটি দেখেন। জাতটি দেখেও তারা আগ্রহী।হর্টিকালচার সেন্টার জানায়, ২০২০ সালের ২৬ জুনে উদ্ভাবিত বারি বেগুন-১২ নামে এ জাতটির সনদ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অণুবিভাগ।নতুন জাতের বেগুন উদ্ভাবন করেছেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা। এই জাতের বেগুনের দুটি রঙের (সবুজ ও কালো) উদ্ভাবন করা হয়েছে।এ বিষয়ে জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে জানান, বারি-১২ জাতের বেগুনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি আকারে অনেক বড়। দেখতে অনেকটা লাউয়ের মতো। দুটি বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটিতে এক কেজি ওজনের হয়ে থাকে বারি-১২ বেগুন।তিনি আরও জানান, এ জাতটি মূলত ইনব্রিড (দেশীয়) জাত। এ জন্য বীজ থেকেই চারা উৎপাদন করা সম্ভব। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।স্বাদের দিক থেকেও অতুলনীয় বলে উল্লেখ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।আব্দুর রহিম বলেন, ‘বেগুনটি আমি নিজে খেয়েছি। ভর্তা ও ভাজি করে খাওয়ার জন্য খুবই সুস্বাদু। আগামীতে আমরা ঠিক করেছি বারি-১২ বেগুনের চারা করব। কৃষক ভাইরাও এই জাত চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর