বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চার কেজির ভাপা, দাম এক হাজার টাকা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:০৩

প্রায় দেড় কেজি আতপ চাল ও আধা কেজি সুগন্ধি পোলাও চাউলের গুড়ায় তৈরি হয় বিশালাকায় এই পিঠা। এতে খেজুরের গুড় লাগে আধা কেজি। আস্ত দুটি নারকেলের পুরোটাই দিতে হয় এতে। এতে কিসমিস দেয়া হয় আড়াইশ গ্রাম। আরও ব্যবহার করা হয় খেজুর, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, মোরব্বা, মাওয়া, মালাই। বাস্পে সেদ্ধ হলে যে ঘ্রাণ আসে, তাতে জিভে জল আটকে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

একটি ভাপা পিঠার দাম কত হতে পারে? কত টুকুই বা বড় হয়? যদি শোনেন ওজন প্রায় চার কেজি, আর দাম এক হাজার টাকা, তাহলে অবাক হবেন তো?

আরও খটকা লাগবে, যখন শুনবেন, রাজধানী বা বড় শহরের কোনো অভিজাত দোকান নয়, মফস্বলের ফুটপাতের দোকানেই এই দামে বিক্রি হচ্ছে এই পিঠা।

এই অতি দামি পিঠার ক্রেতা নিঃসন্দেহে কম, তবে বিরল নয় মোটেও। নিত্যদিনই আসে অর্ডার।

এই পিঠা খেতে চাইলে যেতে হবে নরসিংদী। সদর উপজেলায় অবস্থিত ভেলানগর জেলখানা মোড়ে ফুটওভার ব্রিজের নিচে মালেক মিয়া বিক্রি করেন এই পিঠা।

তবে সব পিঠাই এত দাম নয়, ২০ টাকাতেও সেখানে পাওয়া যায় একটি ভাপা।

পিঠার ব্যবসায় মালেক মিয়া সময় দিয়েছেন এক দশক। তিনি নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। নানা সময় নানা উপাদান যোগ করে পিঠাকে আরও উপাদেয় করার চেষ্টা করেছেন। ভোক্তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়ার পর তার উৎসাহ আরও বেড়েছে।

এসব করতে গিয়েই ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা, ২৫০ টাকা- ইত্যাদি নানা মূল্যের পিঠা তৈরি করছেন মালেক।

বেশি দামের এই পিঠার আকার সাধারণভাবে ছোট ভাপার মতো নয়। বেশ বড়সড় একেকটি পিঠা ১০ থেকে ২০ জনেও খাওয়া যায়।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মালেক মিয়ার দোকানে কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ে।

তবে এই পিঠাই তার জীবিকার একমাত্র অনুষঙ্গ নয়। পরিশ্রমী এই মানুষটি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অটোরিকশা ও সন্ধ্যা থেকে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। তার এই ভাপা ব্যবসা চলে কেবল শীতে। ঠান্ডা কমে গেলেই পিঠা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে তার।

মালেক মিয়ার দোকানে গিয়ে দেখা গেল, পাঁচটি চুলায় পিঠা ভাপ চলছে। দোকানে কর্মচারী আরও দুইজন। আতপ চালের গুড়া, খেজুরের গুড় ও নারকেলের পাশাপাশি এখানে উপাদান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে আরও অনেক কিছু।

সুগন্ধি পোলাও চালের গুড়া, কিসমিম, খেজুর, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, মোরব্বা, মাওয়া, মালাইসহ নানা উপাদান যুক্ত করা হয় এতে।

সেখানে পিঠা খেতে বসেছিলেন রবিন সিকাদার নামে একজন, যার বাড়ি পাশের উপজেলা শিবপুরে। একা আসেননি, এসেছেন বন্ধুদেরকে নিয়ে। জানান, সময় পেলে নিয়মিত আসেন। কারণ হিসেবে বললেন, ‘এ পিঠা অনেক সুস্বাদু। অন্য কোথাও এই স্বাদ আপনি পাবেন না।’

এক নারী জানালেন, ফেসবুকের এক পোস্টে জেনে তিনি এসেছেন রায়পুরা উপজেলা থেকে। তিনি পরিবারের সদস্যদের জন্য ৫০ টাকা দামের ৬টা পিঠা নিয়েছেন। খেয়ে ভালো লাগলে এক হাজার টাকা পিঠা নিতেও আগ্রহী তিনি।

রাহাত নামে এক যুবক জানালেন, তিনি প্রতি বছরই ময়মনসিংহ থেকে আসেন পিঠা নিতে। নিজে খান, স্বজনদের জন্য বানিয়ে নিয়ে যান।

এত কষ্ট করার কারণ কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না খেলে বুঝবেন না এই পিঠার স্বাদ কী। আর একা একা খেলেই হবে? আমার পরিবারের সদস্যরা খাবে না। তাই তাদের জন্য নিয়ে যাই।’

এই দোকানের পিঠার চাহিদা এত বেশি যে, মালেক মিয়া কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তারা দূর থেকে এসেও অনেককে নিরাশ হয়ে যেতে হয়।

যারা পিঠা খেতে পারেনি তাদের কাছে ক্ষমাও চান মালেক মিয়া। গর্ব করেই বললেন, ‘সারা দুইন্যাত মালেক মিয়ার মতো স্বাদের ভাপা পিডা বানাইতে পারব না কেউ।’

যদি পারে?

মালেক মিয়া তাৎক্ষণিক পুরষ্কার ঘোষণা করে বললেন, ‘যদি কেউ বানাইত পারে, তারে বিশ হাজার টেহা পুরষ্কার দেয়াম।’

শীত বিদায়ের মৌসুম চলে আসায় মালেক মিয়া পিঠার দোকানে পাততাড়ি গোটাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর মাত্র নয় দিন আমারে এই দোহানে পাইবেন। এর পরে পিডা খাইতে অইলে আগামী বছর আওয়ন লাগব।’

কী আছে এক হাজার টাকার ভাপায়

প্রায় দেড় কেজি আতপ চাল ও আধা কেজি সুগন্ধি পোলাও চাউলের গুড়ায় তৈরি হয় বিশালাকায় এই পিঠা।

এতে খেজুরের গুড় লাগে আধা কেজি। আস্ত দুটি নারকেলের পুরোটাই দিতে হয় এতে।

এই পিঠায় কিসমিস দেয়া হয় আড়াইশ গ্রাম। আরও ব্যবহার করা হয় খেজুর, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, মোরব্বা, মাওয়া, মালাই।

একবার নয়, বিশাল পাত্রে থরে থরে দেয়া হয় এসব উপকরণ। সব মিলিয়ে তখন একেকটি পিঠার ওজন হয় প্রায় চার কেজি।

এরপর তোলা হয় চুলায়। বাষ্পে সেদ্ধ হলে যে ঘ্রাণ আসে, তাতে জিভে জল আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

এ বিভাগের আরো খবর