শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমি অন্যায়ের কাছে কিছুতেই মাথানত করব না। আপনারা দেখেছেন, সত্য আজ বিজয়ী হয়েছে। মিথ্যা পরাভূত হয়েছে।’
সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে এই মন্তব্য করেন উপাচার্য।
এ সময় আগামী দুই বছরের মধ্যে শাবিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা দেন উপাচার্য।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা ২৭ দিন আন্দোলন করেন শাবি শিক্ষার্থীরা। শনিবার সেই আন্দোলন প্রত্যাহারের পর আজই প্রথম ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শোভাযাত্রার শুরুতে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোমলমতি, তারা ভুল করতেই পারে। তবে শিক্ষকরা হচ্ছেন তাদের অভিভাবক। তারা শিক্ষার্থীদের ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাদের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এমন কিছু শিক্ষকরা করবেন না।’
উপাচার্য বলেন, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশের মধ্যেই পড়ালেখা, গবেষণা ও বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে রয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে বুয়েট ও ঢাবির পরই শাবির অবস্থান। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার। কারও ব্যক্তিগত সমস্যাও আমাদের সবার সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা চলছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমি যখন এখানে যোগ দেই তখন অনেক জায়গায় কাজ করার সুযোগ ছিল। আমি যোগ দিয়ে চার বছরের সেশনজট কমিয়ে এনেছি। র্যাগিং ও যৌন হয়রানি বন্ধ করেছি। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়িয়েছি। পরিবহন, হলসহ শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই লাঘব করা হয়েছে। বাকি সমস্যা লাঘবেও কাজ চলছে।’
সংবাদকর্মীদের প্রতি বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের ভালো কাজগুলো তুলে ধরুন। খারাপ কিছু করলে তাও প্রকাশ করুন। তবে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।’
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। এরপর বর্ণিল শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এতে শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের একটি অংশও শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর কেক কাটেন উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রোববারের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি ক্লাস পরীক্ষা ও হল বন্ধের ঘোষণা করা হয়। তবে তখন আন্দোলনকারীরা হল বন্ধের নির্দেশনা না মেনে হলে অবস্থান করেন। আগামীকাল থেকে শাবিতে শুরু হচ্ছে অনলাইনে ক্লাস।
প্রসঙ্গত ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সবশেষ অফিস করেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। ওই রাত থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
১৭ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ১৯ জানুয়ারি থেকে সেখানে অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
এরপর উপাচার্যের বাসার সামনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে ভেতরে কারো প্রবেশ বন্ধ করে দেন তারা। এক দিনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। উপাচার্যের কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
২৬ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। ওই দিনই উপাচার্যের বাসার সামনের ব্যারিকেড তুলে নেন তারা। তবে এরপরও বাসায় ছিলেন উপাচার্য।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ক্যাম্পাসে এলে শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৬ দিন পর বাসা থেকে বের হয়ে কার্যালয়ে এসে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য।
ওই বৈঠকে উপাচার্যকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এতে উপাচার্যের বিষয়ে তাদের আপত্তির বিষয়টি আচার্যকে অবহিত করার আশ্বাস দেন দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রীর এই আশ্বাসের পর শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শনিবার দুপুরে ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন উপাচার্য।