বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে: মাহবুব তালুকদার 

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:২২

ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?’

পাঁচ বছর দায়িত্বের শেষ দিনে এসে আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মূল্যায়ন হলো, নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের লাশ পড়ে গেছে।

একই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নিজেদের সফল দাবি করে বলেছেন, তাদের কিছু ছোটোখাটো ভুল থাকতে পারে।

গোটা পাঁচ বছর সিইসির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো মাহবুব তালুকদারের মূল্যায়ন একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো। বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সোমবার তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?’

কথাটা রূপকার্থে বলার কথা জানিয়ে মাহবুব বলেন, ‘এটাই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করা কমিশনের শেষ কর্মদিবস সোমবার সিইসি ও মাহবুব তালুকদার একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেননি।

এই পাঁচ বছর নানা ঘটনায় ভিন্ন অবস্থান নেয়া দুজনের আলাদা সংবাদ সম্মেলন এই কমিশনের মধ্যকার বিভেদ বিদায়বেলায় আরও স্পষ্ট হলো।

সিইসি সংবাদ সম্মেলন করেন আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের লেকভিউ চত্বরে। সঙ্গে ছিলেন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম।

অন্যদিকে মাহবুব তালুকদার গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন তার কার্যালয়ে। মুক্তভাবে কিছু কথা বলতেই এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

পাঁচ বছর আগে এই কমিশন যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। তবে তার আগের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও তার জোটের বর্জন করায় এই নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে কি না, সেই চ্যালেঞ্জ ছিল।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেই ভোট অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বটে, তবে বিতর্কমুক্ত হয়নি। পরাজিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট অভিযোগ করেছে, আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। তবে বিদায়ী বছরে এই অভিযোগ খণ্ডন করে সিইসি বলেছেন, তিনি রাতে ভোট হতে দেখেননি। আর কেউ এ নিয়ে মামলাও করেনি।

গোটা পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকারের নানা ভোট আর জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনও পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক ও বিতর্কহীন করা যায়নি। বিদায়ের আগে আগে ইউনিয়ন পরিষদের যে নির্বাচন ধাপে ধাপে হয়েছে, সেগুলোতে শতাধিক মানুষের প্রাণ ঝরেছে। এই প্রাণহানির কোনো দায় নেয়নি নির্বাচন কমিশন।

তবে প্রতিটি ঘটনায় মাহবুব তালুকদারের মূল্যায়ন ছিল কমিশনের অন্যদের চেয়ে আলাদা।

গোটা পাঁচ বছরে নির্বাচন কমিশনের নানা সিদ্ধান্তে ভিন্নমত দেয়া, গণমাধ্যমের সামনে এসে কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বিপরীতমুখী অবস্থান আর জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছে না বলে নানা সময় বক্তব্য দিয়ে তুমুল আলোচিত হয়েছেন মাহবুব তালুকদার।

আলাদা সংবাদ সম্মেলনের কারণ কী তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তভাবে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। অন্য কমিশনারদের সংবাদ সম্মেলনে আমার কথা মানানসই হতো না।’

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকটের আশঙ্কা

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকটের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার।

বলেন, ‘আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, সংকটের সমাধান হবে না।

‘এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।’

তবে আশাবাদী মানুষ হিসেবে সব সংকটের সমাধান দেখতে চাওয়ার কথাও বলেন তিনি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অংশ নিলেও বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে যাওয়ার কারণে এই সংকটের আশঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে বিএনপি কোনো নাম দেয়নি। রাষ্ট্রপতির সংলাপেও যায়নি তারা। আবার আন্দোলনের সিদ্ধান্তও হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি মাহবুব তালুকদার।

ইসির বড় দুর্বলতা কী?

পাঁচ বছরের কাজের বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত বিরল।

‘লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না।‘

তবে মেয়াদের শেষভাগে এসে গত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে বলে মনে করেন মাহবুব তালুকদার।

তার মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

‘উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প নয়’

লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই, গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না।’

বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে গণতন্ত্রের শর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতাগণ আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।’

ব্যবসায়ীদের হাতে যাচ্ছে রাজনীতির দখল

এমন মূল্যায়ন করে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন-ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?’

বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে কাছ থেকে কীভাবে দেখেছেন সেই মূল্যায়নও তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার। বলেন, ‘নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়।’

‘আমি বিএনপির সুর জানি না’

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি যে বিএনপির পক্ষের লোক সেটা জানলাম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের একটা প্রেস ব্রিফিং থেকে। বলা হয় আমি বিএনপির সুরে কথা বলি। কিন্তু আমি বিএনপির সুর জানি না।

‘আমি নীরব গোষ্ঠীর ভাষা বুঝিতে চেষ্টা করেছি। আমি ইসি হিসেবে পাঁচজনের একজন। কিন্তু একজনের পক্ষে কিছু করা যায় না।

‘আমি গণতন্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে কমিশনে গণতান্ত্রিকভাবে সংখ্যালঘু হয়ে গেছি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে কমিশনের সভায় আমাকে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি।’

‘কমিশনের বিরোধ ব্যক্তিগত সম্পর্কে নয়’

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার জানান, নুরুল হুদার সঙ্গে যে বিরোধ ছিল, সেটি কমিশনের বিষয়। চিন্তা ধারায় এই বিভেদ ব্যক্তিগত সম্পর্কে পড়বে না।

তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আমরা একত্রে ছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমরা একত্রে থাকব।’

এ বিভাগের আরো খবর