প্রকৃতিতে এসেছে বসন্ত। বসন্ত শুরুর দিন এবার ভালোবাসা দিবসও। একই দিনে দুই বিশেষ দিবস নিয়ে নানা মানুষের আছে নানা পরিকল্পনা।
প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিতে অনেককে রোববার দুপুরের পর থেকেই ভিড় জমাতে দেখা যায় ফুলের দোকানে। বিশেষ দিবস উপলক্ষে দাম কিছুটা বেশি হলেও খুশি মনেই কিনছেন সবাই।
দিন যত গড়ায় ভিড় তত বাড়তে থাকে দোকানে। কেউ সকালে প্রিয়জনকে উপহার দেবেন, কেউ নিজেকেই সাজাবেন ফুলে।
বরিশাল নগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কের প্রায় ১০টি ফুলের দোকানে রোববার দুপুর থেকেই ছিল উপচে পড়া ভিড়।
ফুল কিনতে আসা কলেজছাত্র রাফিউল ইসলাম সজীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোলাপের একটি তোড়া কিনেছি ভালোবাসার মানুষের জন্য। দোকানে অনেক ভিড় ছিল। প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারপর কিনতে পেরেছি। গোলাপের সঙ্গে টিউলিপ আর লিলিও ছিল।’
ফুলের আরেক ক্রেতা জেরিন ইসলাম বলেন, ‘বসন্ত উপলক্ষে ফুল কিনতে এসে রীতিমতো অবাক হয়েছি। গত বছরের চেয়ে এবার দাম অনেক বেশি। গতবার যে গোলাপের দাম ছিল ২০ টাকা, সেটা এবার ৪০ টাকা। তাজা ফুলের ক্রাউনের দাম অনেক বেশি। তাই ১০০ টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের ক্রাউন কিনেছি।’
বরিশাল ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও বনফুল ফুল ঘরের মালিক ইব্রাহিম মুন্না জানান, এক দিনে দুই দিবস উপলক্ষে প্রতি দোকানেই প্রায় ১ লাখ টাকার ফুল মজুত করা হয়েছে। গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৬০ টাকায়, গ্লাডিওলাস ২০ থেকে ৩০ টাকায়, রজনীগন্ধা ১৫ টাকায় ও লিলি ৩০০ টাকায়। দেড় শ থেকে আড়াই শ টাকা দাম প্রতিটি ফুলের ক্রাউনের। বিক্রি বেশি হলে আবার দামে কিছুটা তারতম্য হয়।
মুন্না বলেন, ‘রোববার রাত পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। বেশির ভাগ দোকানিই লোকসানের ভয়ে আছেন।’
ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় সাভারের ফুলের দোকানিদেরও। বিক্রির মাঝে কথা বলার মতো অবসরও নেই অনেকের।
সাভারের নবীনগর এলাকার রজনীগন্ধা পুষ্পালয়ের মালিক ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ফুলের দোকানিরা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের অপেক্ষায় থাকি। গোলাপের চাহিদাই বেশি থাকে। পাশাপাশি তোড়া ও রিংও বিক্রি হয়। আকারের ভিত্তিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় গোলাপ বিক্রি হচ্ছে। তোড়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
‘আমরা সাভারের ফুল বিক্রেতারা সাধারণত বিরুলিয়ার বাগান থেকে গোলাপ কিনি। এ বছর রোগের কারণে অধিকাংশ ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাগানে ১০০ ফুলের আঁটির পাইকারি দাম আড়াই হাজার টাকা। তবে যশোর থেকে এই আঁটি কিনেছি ১৬০০ টাকায়।’
ভাই ভাই পুষ্প বিতানের মালিক মিজানুর রহমান জানান ব্যস্ততার কথা। বলেন, ‘রোববার বিকেলের পর থেকে মূল বিক্রি শুরু হয়েছে। আমার দোকানের চার থেকে পাঁচ কর্মচারী একটানা কাজ করছেন। সোমবার সকাল থেকেও অনেক ভিড়। গোলাপ ফুলই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
শেরপুরে ফুলের স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি অনেকেই দুই দিনের জন্য অস্থায়ী দোকান দিয়েছেন।
স্বাধীন নামের এক যুবক বলেন, ‘আমি একজন ছাত্র। প্রতি বছর ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করি। এতে আমার প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ থাকে। এই টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে খরচ করি।’
ফুল কিনতে আসা যুবক জাহিদুল খান সৌরভ বলেন, ‘ফুল কার কাছে ভালো লাগে না? তার ওপর যদি হয় ভালোবাসার ফুল। আমি আগের চেয়ে বেশি দামে একটা ফুল কিনলাম। কারণ ভালোবাসার মানুষকে দিতেই হবে।’
কথা হয় ফুল কিনতে আসা রাব্বি ও ঝরনা দম্পতির সঙ্গে।
ঝরনা বলেন, ‘এটা আমাদের বিবাহিত জীবনের অষ্টম বসন্ত। গত বছর করোনা মহামারির জন্য ভালোভাবে ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন পালন করতে পারিনি। এবার করোনা থাকলেও ঝুঁকি কম। তাই ভালোবাসা দিবসে দুজন দুজনকে শুভেচ্ছা জানাতে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গেই এসেছি ফুল কিনতে।’