বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মতিয়া চৌধুরীর প্রেম ও বিয়ের গল্প

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:০৫

আজকের যুগের মতো হাতে হাত রেখে পার্কে বা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসার পরিবেশ-সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিল না তাদের। রাজনীতির মাঠে ব্যস্ত ছিলেন, তবু সেটা প্রেমই ছিল। মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন বজলুর রহমানের সঙ্গে তার প্রেম ও পরিণয়ের কাহিনি।  

তাদের ঠিক প্রথাগত প্রেম ছিল না। ছিল পরস্পরের প্রতি ভালো লাগা, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস আর আকর্ষণ। দুজন দুজনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন জীবনে চলার পথে সঙ্গী হবেন, একসঙ্গে জীবন কাটাবেন, বিয়ে করে সংসার করবেন; হবেন পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল, বন্ধু ও সহযোগী।

আজকের যুগের মতো হাতে হাত রেখে পার্কে বা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসার পরিবেশ-সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিল না তাদের। ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষে কম-বেশি গুছিয়ে নিয়ে বিয়ে করবেন, কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির কারণে একজনের লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং দৈনিক সংবাদের প্রয়াত সম্পাদক বজলুর রহমানের প্রেম-বিয়ে-ভালোবাসার গল্পটি এ রকম।

সফল রাজনীতিক, দুবারের কৃষিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী তার প্রেম ও বিয়ের গল্প নিউজবাংলার কাছে তুলে ধরেছেন।

মতিয়া চৌধুরী ও বজলুর রহমানের পরিচয় ষাটের দশকের শুরুতে, বরিশালে। মতিয়া চৌধুরী পিরোজপুরের সন্তান। বজলুর রহমান ময়মনসিংহের। বজলুর রহমান তখন বরিশালে তার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করছিলেন। থাকতেন শহরের একটি মেসে। সেখানে তার রুমমেট ছিলেন মতিয়া চৌধুরীর ছোট মামা মোস্তফা জামাল হায়দার, যিনি মতিয়া চৌধুরীর চেয়ে মাত্র আট মাসের বড় ছিলেন। এ কারণে মামার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

মামার সূত্রেই মামার রুমমেট বজলুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় মতিয়ার। পরবর্তী দেখা-সাক্ষাৎগুলোতে ধীরে ধীরে ভালো লাগা গড়ে ওঠে। পরিচয়ের পর থেকেই মতিয়া চৌধুরীদের বাসায় বজলুর রহমানের যাতায়াত বেড়ে যেতে থাকে। বাসার আড্ডার ভিড়ে তারা বুঝে নেন একে অপরের মনের কথা। দুজন সিদ্ধান্ত নেন লেখাপড়া শেষে সুবিধামতো সময়ে বিয়ে করবেন। বিয়ে তারা করেছিলেন, কিন্তু সেটা সুবিধামতো সময়ে হয়নি; বরং ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়, কিন্তু বিয়ের আগে ঘটে এক নাটকীয় ঘটনা।

ইডেন কলেজে এইচএসসি এবং বিএসসি শেষে ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্তি হন মতিয়া চৌধুরী। ততদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক (অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর) হিসেবে যোগ দিয়েছেন বজলুর রহমান। দুজনেই ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, তবে ক্যাম্পাসে বা রাজপথে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বললেই চলে। তাদের ভাব বিনিময় হতো মতিয়া চৌধুরীদের বাসায়।

মতিয়া চৌধুরী আগে থেকে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করতেন, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেগবান হয়েছে। ১৯৬৩-৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে রোকেয়া হলের ভিপি এবং ১৯৬৪ সালে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় যে কয়েকজন ছাত্রনেতা আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অন্যতম ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তাকে আন্দোলন থেকে কোনোভাবে নিবৃত্ত করতে না পেরে সরকার ভিন্ন পন্থা বেছে নেয়। তার বাবা তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে চাপ দিতে শুরু করে সরকার।

একপর্যায়ে মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এ বিষয়ে মতিয়া জানান, তারা বাবাকে একটি চিঠি দেয়া হয়, যাতে লেখা ছিল ‘কন্ট্রোল ইয়োর ওয়ার্ড (Ward), আদারওয়াইজ ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন শুড বি টেইকেন এগেইনস্ট ইউ।’

এরপর মতিয়া চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেন বাবাকে অভিভাবকের দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করার। তিনি তার ভাইয়ের মাধ্যমে বজলুর রহমানকে চিঠি পাঠান, যাতে বজলুর রহমান বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। চিঠি পেয়ে মতিয়া চৌধুরীর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন বজলুর রহমান। মতিয়া চৌধুরীর বাবা তার সঙ্গে কথা বলেন।

তখন মতিয়া তার বাবাকে জানান, তিনি অভিভাবকত্ব থেকে তাকে মুক্তি দিতে চান। এর প্রতিক্রিয়ায় তার বাবার মুখে কষ্টের ছায়া পড়ে। তিনি বজলুর রহমানের প্রস্তাবে আপত্তি না করে তাকে পারিবারিকভাবে প্রস্তাব পাঠাতে বলেন। পরে বজলুর রহমান অভিভাবকদের নিয়ে মতিয়া চৌধুরীর বাসায় গিয়ে প্রস্তাব দেন। আলাপ-আলোচনা শেষে দুই পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন তাদের বিয়ে হয়।

মতিয়া চৌধুরী জানান, বিয়ের অল্প কিছুদিন পরই তিনি গ্রেপ্তার হন; শুরু হয় ছন্নছাড়া জীবন। রাজনীতি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে; সংসার সেভাবে করা হয়ে ওঠেনি।

রাজনৈতিক জীবনে মতিয়া চৌধুরীকে ১৫ বার গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। এর মধ্যে আইয়ুব শাসনামলে পরপর চারবার জেলে যেতে হয়েছে তাকে। শেষ দুই বছর টানা জেলেই থাকতে হয়েছে। ১৯৬৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্তি পেলে তিনিও মুক্তি পান।

১৯৭৫ সালের পর প্রাণনাশের হুমকিতে বেশ কয়েক মাস কাটিয়েছেন আত্মগোপনে। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে আবারও জেলে যেতে হয়েছে। টানা পাঁচ মাস কারাগারেই কাটান। এরশাদ সরকারের আমলে ৯ বার যেতে হয়েছে কারাগারে।

১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতিয়া চৌধুরীকেও জেলে যেতে হয়।

ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। প্রয়োজন হয় অভিভাবক বদলের। রাজপথের আন্দোলন, জেল-জুলুম আর নির্যাতনের দিনগুলোতে বটবৃক্ষের মতোই ছায়া দিয়েছেন জীবনসঙ্গী বজলুর রহমান। ২০০৮ সালে বজলুর রহমানের মৃত্যু এসে বিচ্ছেদ ঘটায় যৌথ পথ চলার।

এ বিভাগের আরো খবর