পাঁচ বছরে নানা আলোচিত-বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বিদায় বেলায় তার সময়ের মূল্যায়নে বলেছেন, তারা সফল, তবে যে ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো ছোটখাটো।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করা হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে যেদিন, সেদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। সেই সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংশোধনে দিনটি ফাল্গুনের প্রথম দিন হিসেবেও পালিত হচ্ছে।
এই দিনটিতে সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের লেকভিউ চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলন আসেন সিইসি।
পাঁচ বছর আগে তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। তবে তার আগের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও তার জোটের বর্জন করায় এই নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে কি না, সেই চ্যালেঞ্জ ছিল।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেই ভোট অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বটে, তবে বিতর্কমুক্ত হয়নি। পরাজিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট অভিযোগ করেছে, আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। তবে বিদায়ী বছরে একে এই অভিযোগ খণ্ডন করে সিইসি বলেছেন, তিনি রাতে ভোট হতে দেখেননি। আর কেউ এ নিয়ে মামলাও করেনি।
গোটা পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকারের নানা ভোট আর জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনও পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক ও বিতর্কহীন করা যায়নি। বিদায়ের আগে আগে ইউনিয়ন পরিষদের যে নির্বাচন ধাপে ধাপে হয়েছে, সেগুলোতে শতাধিক মানুষের প্রাণ ঝরেছে। এই প্রাণহানীর কোনো দায় নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের পাঁচ বছরের মূল্যায়ন করে সিইসি বলেন, ‘গত পাচঁ বছরে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে হয়ত ছোট-খাটো কিছু ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। তবে আমি এবং আমার কমিশন চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে।
‘আমরা আমাদের সময়ে নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কিছু কিছু কাজে আমরা সফল হইনি। কারণ, করোনার কারনে গত দুটি বছর আমরা পিছিয়ে গেছি। তারপরেও আমাদের চেষ্টা ছিল।’
সিইসি জানান, এই পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদের নির্বাচনসহ প্রায় ৬ হাজার ৬৯০টি নির্বাচন করেছি। কিছু নির্বাচন বিভিন্ন কারণে বাকি রয়েছে।
সিইসির সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানমও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না আলোচিত কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাবেক আমলা কে এম নূরুল হুদাকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করেন। কমিশনে মাহবুব তালকুদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
মোটেই বিব্রত নই
এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, তিনি তার দায়িত্ব পালন কালে কোনো ঘটনার জন্য বিব্রতবোধ করেন না।
আপনি বিব্রত বোধ করছেন কি না- একজন গণমাধ্যমকর্মী এমন প্রশ্ন করলে জবাব আসে, ‘মোটেই না। বিব্রত নই, কোনো দুর্বলতা নেই। আমরা নিরপেক্ষ থেকে কাজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের দায়িত্বে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের উপর যে দায়িত্ব ছিল, কঠোর পরিশ্রম করে সে দায়িত্ব পালন করেছি।’
নির্বাচনের আয়োজন করা ছাড়া এই পাঁচ বছরে আর কী কী করেছেন, সেটিও তুলে ধরেন সিইসি। বলেন, ‘আইন সংস্কারের বেশ কিছু কাজ করেছি। আরপিওসহ বাংলায় রুপান্তরসহ অনেকগুলো বিধিমালা করেছি।
‘২৪ হাজার ৮৮১ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বিশেষ করে ইভিএমে। করোনার কারণে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারিনি।’
নুরুল হুদা বলেন, ‘ইভিএম বড় ধরনের চৌালেঞ্জ ছিল। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তা করতে পেরেছি। এনআইডি সহজীকরণ করা হয়েছে। ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে।
‘আমরা মনে করি যে আমাদের উপর যে দায়িত্ব ছিল কঠোর পরিশ্রম করে সে দায়িত্ব পালন করেছি।’