বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইতালির পথে মৃত্যু, বাড়িতে মরদেহ

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৫৩

নড়িয়া থানার ওসি অবনি শংকর কর বলেন, ‘দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ওই তরুণ অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে দালালচক্রের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

প্রিয় সন্তান ইতালি থেকে ফিরেছে, তবে লাশ হয়ে। সন্তানের নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে বাবা আবুল বাশারকে বাড়ি ফিরতে হবে ভাবেনি কেউ।

লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নিহত কামরুল হাসান বাপ্পির মরদেহ রোববার বিকেলে তার বাড়ি শরীয়তপুরে পৌঁছেছে। টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে তার মরদেহ দুপুরে ঢাকায় পৌঁছায়। রাতেই জানাজা শেষে চেরাগ আলী মাদবরকান্দি গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সন্তানের মরদেহ দেখে মা লাভলি বাশার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কিছু সময় পর পর আর্তনাদ করে সন্তানের নাম ধরে ডাকছেন। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মূলপাড়া চেরাগ আলী মাদবরকান্দি গ্রামের আবুল বাশার ও লাভলি বাশার দম্পতির তিন সন্তান নিয়ে সংসার। অভাব-অনটনের সংসারে খানিকটা স্বাচ্ছন্দ্য আনতে বড় ছেলে ২২ বছরের কামরুল হাসান বাপ্পিকে ইতালি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।

সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার জন্য গত বছরের ৮ নভেম্বর বাপ্পি দালালের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৩ জানুয়ারি রাতে বাংলাদেশ, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের ২৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় করে লিবিয়ার ত্রিপোলি উপকূল থেকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন।

যাত্রা শুরুর এক দিন পর ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড ঝড় ও বাতাসের পর টানা বৃষ্টির কবলে পড়ে তারা। নৌকাটি লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছালে ইতালিয়ান কোস্ট গার্ডের সদস্যরা নৌকা থেকে সাত বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করেন। তাদেরই একজন বাপ্পি। তবে তার মৃত্যুর খবরটি পরিবার জানতে পারে গত ৩১ জানুয়ারি।

আবুল বাশার বলেন, ‘ছেলে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছিল। অভাব মেটাতে নিশ্চিত বিপদ জেনেও ছেলেকে সমুদ্রপথে ইতালি পাঠাই। কিন্তু ছেলের নিথর দেহ আমাকে বইতে হবে তা কখনও ভাবিনি।’

তিনি জানান, গ্রামে নাসির ব্যাপারী নামের একজন লিবিয়া থাকত। এখন গ্রামের ছেলেদের লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি পাঠানোর কাজ করেন তিনি। ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য তাকে ৮ লাখ টাকা দেন তিনি।

ইতালি যাওয়ার জন্য নাসির ব্যাপারী প্রথমে ছেলেদের দুবাইয়ের দালালদের কাছে পাঠায়। এরপর আরেক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ার বেনগাজিতে, সেখান থেকে ত্রিপোলির মরুভূমিতে নিয়ে দুই মাস আটকে রাখে অন্য দালালরা।

এরপর লিবিয়ার নাগরিক (দালাল) ২৩ জানুয়ারি বাপ্পিসহ ২৮০ জন যাত্রীকে ইঞ্চিনচালিত নৌকায় সমুদ্রে ছেড়ে দেয়।

আবুল বাশার বলেন, ‘ছেলে মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তিন মাসে ছেলে পাঁচজন দালালের হাত বদল হয়েছে। ছেলে মারা গেছে এমন খবর পেয়ে নাসির ব্যাপারী গ্রাম থেকে পালিয়েছে।’

বাপ্পির মা লাভলি বাশার বলেন, ‘আমরা অসহায় মা-বাবা সুখ আনতে ছেলেকে ইতালি পাঠিয়েছিলাম। ছেলে যে আমৃত্যু আমাদের জন্য দুঃখ নিয়ে নিথর দেহে ফিরবে তা কে জানত? এখন আমি কী নিয়া বাচুম।’

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর বলেন, ‘দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে নড়িয়ার ওই তরুণ অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে দালালচক্রের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর