জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির ভারসাম্যের মতো নষ্ট হয়েছে ঋতুরাজ বসন্তের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যও। আজ পয়লা ফাল্গুন হলেও বসন্তের ফুলগুলো কোথাও কোথাও ১৫ থেকে ২০ দিন আগে ফুটেছে। আবার কোথাও ফুলে ফোটেইনি, তবে ফুল ফুটুক বা না ফুটুক, থেমে নেই ঋতুরাজের আগমনী উৎসব।
ফাগুনকে বরণ করে নিতে প্রতি বছরের মতো এবারও উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ স্লোগানকে সামনে রেখে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে সাতটা থেকে পরিষদের আয়োজনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বসন্ত আবাহন। লাল, হলুদ, বাসন্তী রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং রঙিন ফুলে সেজে নানা বয়সের মানুষ হাজির হন।
মন মাতানো গান আর নৃত্য পরিবেশনায় মেতে ওঠেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বসন্তের এই আবাহন চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত।
‘বেঙ্গল মিউজিক’ এর বাদ্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। পরে কবিতা আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য, লোকগীতি, পল্লীগীতি, আদিবাসীদের পরিবেশনার পাশাপাশি ‘বসন্তের কথন’ নামে ছিল আলোচনাসভাও।
প্রতি বছর নানা আয়োজন-উৎসবে বসন্তকে বরণ করে নিত নগরবাসী। সবচেয়ে বড় উৎসব হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়, তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে গতবারের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বসন্তবরণ উৎসব হচ্ছে না। শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে কেন্দ্রীয়ভাবে এই বসন্ত উৎসবের আয়োজন হয়েছে।
জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ গত ২৮ বছর ধরে নাগরিক জীবনে বাসন্তী আনন্দ আর ফাগুনের আবির ছড়িয়ে আসছে। গত দুই বছর ধরে বসন্তের সঙ্গে মিলেছে ভালোবাসা দিবসও।
একটি বাঙালি সংস্কৃতি, অন্যটি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। একটি প্রকৃতিকে বরণ করার আর অন্যটি আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দিন। এবার দুইই মিলেমিশে একাকার। আর এ কারণে অনেকের কাছে আনন্দও আজ দ্বিগুণ।
শ্বশুর-শাশুড়ি ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে মিরপুর থেকে বসন্ত উৎসবে আসেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর পরিবারসহ আমরা বসন্ত উৎসবে আসি। ঈদ ও পূজার ন্যায় আমরা নতুন জামাকাপড় পড়ে বসন্ত উৎসবে আসি।
‘আজকের দিনটা আমার কাছে গুরুত্ব বহন করে। সারা দিন আনন্দ-উল্লাস করে দিনটি অতিবাহিত করতে চাই।’
ভালোবাসা দিবস এবং বসন্ত উৎসব কোনটিকে প্রাধান্য দেবেন জানলে চাইলে উৎসবে আসা নুরুল্লাহ নামের একজন বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস বিদেশ থেকে ধার করা একটি সংস্কৃতি। তাই ভালোবাসা দিবস নিয়ে আমার আগ্রহ নেই, তবে বসন্ত উৎসব নিয়ে আমার আগ্রহ আছে ব্যাপক। তাই এটি উদযাপন করতে এখানে এসেছি।’
প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে বসন্ত উৎসবে শামিল হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তমা রায়।
তিনি বলেন, ‘আমি বরাবরই পহেলা ফাল্গুন পালন করে আসছি। ফাল্গুন আমাদের বাঙালি ঐতিহ্যের অংশ। আর প্রেম হলো মানুষের সহজাত প্রবণতা।
‘তাই দুইটি দিবসও যেহেতু একসঙ্গে এসেছে, এটিকে আনন্দময় করে তুলতে ভালোবাসার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উৎসবে শামিল হয়েছি।’