পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সামিট পাওয়ার ও কেপিসিএলসহ পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে টানা কয়েক মাসের অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর মৌখিক সমঝোতা হয়েছে। এখন কেবল চুক্তি করা দাবি।
শর্তগুলো প্রকাশ না করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) দেওয়ান সামিনা বানু বলেছেন, ‘একটি উইন উইন সিচুয়েশন’ হবে।
অর্থাৎ কোম্পানিগুলোও যেন লাভবান হয়, আর সরকারেরও যেন অতিরিক্ত অর্থ খরচ না হয়, এই বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের নানা সময়ে। এরপর কোম্পানিগুলো সেগুলোর মেয়ার বাড়ানোর আবেদন করে।
তবে সরকার ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা কুইক রেন্টালের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে মেয়াদ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুরোধের পর সে অবস্থান থেকে সরে আসে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যে আইনের অধীনে চলেছে, সেই ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০১০’ এর মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানো হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।
জাতীয় সংসদ মেয়াদ বৃদ্ধির বিলে সায় দেয়ার পাঁচ দিন পর বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে চার কোম্পানির বৈঠক হয় বিদ্যুৎ ভবনে। সেই বৈঠকে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংশ্লিষ্ট ১৪টি বিভাগের প্রতিনিধি অংশ নেয়।
কেপিসিএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র
বৈঠকে খুলনা ও যশোরে কেপিসিএলের ১৫৫ মেগাওয়াটের দুটি, নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে সামিটের ১০২ মেগাওয়াটের একটি, একই জেলার মেঘনাঘাটে ওরিয়ন গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াটের একটি এবং সিদ্ধিরগঞ্জে ডাচ্-বাংলার পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের ১০০ মেগাওয়াটের আরও একটি কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি জানানো হয়।
তবে বেশ কিছু বিষয়ে মতৈক্য হয়নি। এরপর আবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
কোম্পানিগুলো সরকারের নেয়া ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ এর নীতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে রাজি হলেও তাদের দাবি ছিল ন্যূনতম বিদ্যুৎ ক্রয়। তাদের যুক্তি ছিল, কেন্দ্র চালু রাখার পর সারা বছরে সরকার যদি কোনো বিদ্যুৎ না কেনে, তাহলে তাদের লোকসান হবে।
এ জন্য তারা ন্যূনতম ক্যাপাসিটি চার্জ চার্জ, অর্থাৎ বিদ্যুৎ না কিনলে কেন্দ্র চালাতে যে খরচ হয়, সেটি চাইছিল। সেটি না দিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার গ্যারান্টি চাইছিল তারা।
সেই বৈঠকের প্রায় পাঁচ মাস পর গত সপ্তাহে কোম্পানিগুলো সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে। তবে কোন কোন শর্ত, সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
কেপিসিএলের কোম্পানি সচিব মোজাম্মেল হোসাইন নিউজবাংলাকে সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে কোন কোন শর্তে সমঝোতা হয়েছে, সেটি তিনি জানাতে পারেননি। বলেন, ‘এগুলো তো সিনিয়রদের বিষয়। আমাদের কাছে এখনও আসেনি।’
বিশেষ করে কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীদের জন্য এই সংবাদটি খুবই স্বস্তিদায়ক এ কারণে যে, এই কোম্পানির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আয়ের উৎস হিসেবে কেবল একটি সহযোগী কোম্পানির ৩৫ শতাংশের মালিকানার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে সেই অংশের আয়ে অর্ধবার্ষিকে কোম্পানিটি লোকসানে আছে।
এই অবস্থায় এই সমঝোতার বিষয়টি একটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হতে পারে। সেটি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কবে জানানো হবে- এমন প্রশ্নে কেপিসিএলের কোম্পানি সচিব বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদেরকে জানানোর মতো আমাদের কাছে ডকুমেন্ট এখনও আসেনি। আসলেই জানিয়ে দেব।’
সহসাই আসবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো সরকারের ওপর নির্ভর করে। তবে সমঝোতা যেহেতু হয়েছে, আমরা আশাবাদী সহসাই হয়ে যাবে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) দেওয়ান সামিনা বানুও নিউজবাংলাকে সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে চুক্তি কবে হবে, সেই বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘সবে তো একটা সমঝোতা হলো। প্রা্ইসটা ফিক্সড হলো। এখনও চুক্তি পর্যায়ে যাওয়া হয়নি। কী পরিমাণ বিদ্যুৎ আমরা নেব বা তারা দেবে সেই কন্ডিশনটা এখনও ঠিক হয়নি। বিদ্যুৎ পারচেজ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে চুক্তি পর্যায়ে যাওয়ার মতো কন্ডিশন ঠিক করা হবে।’
কবে নাগাদ পারচেজ সংক্রান্ত বৈঠক হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যে একটা বৈঠক হতে পারে। তারিখটা এখনও ঠিক হয়নি ‘
সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কেনা বা নেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আপনাদের শর্তটা কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই সদস্য বলেন, ‘সেটি হবে উইন উইন সিচুয়েশনে। যার যত ক্যাপাসিটি আছে সেই মানদণ্ড অনুযায়ী আমাদের চাহিদার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ নেব। সেখানে আমরা চাহিদার ভিত্তিতে কোনো সময় বিদ্যুৎ না-ও নিতে পারি, সেই কন্ডিশনও থাকবে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজাও অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, ‘আমরা কোম্পানিগুলোর প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিদ্যুৎ নেব। তবে সেখানে এই শর্তও থাকবে যে আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার ভিত্তিতেই নেয়া হবে সেই বিদ্যুৎ।’