বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুর্ভোগের আরেক নাম ইলিশা ফেরিঘাট

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৯:৩৮

ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজিত হাওলাদার বলেন, ‘ইলিশা ফেরিঘাটে জমি নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে পার্কিং নির্ধারিত হচ্ছে না। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।’

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সহজ যোগযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুট। অথচ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ রুটের ইলিশা ফেরিঘাট। চালুর একযুগ পরও ঘাটটিতে গড়ে ওঠেনি টার্মিনাল, নেই বিকল্প পার্কিং ব্যবস্থাও।

এতে ঘাটের পাশে মহাসড়কের ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তার ওপর রাখা হচ্ছে মালবোঝাই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ অন্য যান। এ কারণে রুটটিতে যানজট নিত্যদিনের। এ ছাড়া ফেরিসংকট ও নাব্যতা সমস্যা তো রয়েছেই। ঘাটটিতে নেই যাত্রীছাউনি ও ওয়াশরুমও।

এসব কারণে রুটে চলাচলকারী কয়েক শ পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, জটের কারণে ঘাটে এসে ৫ থেকে ৬ দিন আটকে থাকতে হয় ট্রাকগুলোকে। এতে তাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় নৌ-মন্ত্রীরা ঘাটটি পরিদর্শন করে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনও।

বরিশাল থেকে আসা পরিবহন শ্রমিক সেলিম নাজির জানান, ইলিশা ঘাটটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেই। পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপর গাড়ি রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে দোকানিদের গালমন্দও হজম করতে হচ্ছে।

ঘাটের পাশে মহাসড়কের ওপর যানবাহন পার্কিং করায় সংকীর্ণ রাস্তায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: নিউজবাংলা

ট্রাকচালক মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘ঘাটে এলে ফেরির জন্য সিরিয়াল নিতে আমাদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজর নেই।’

তবে জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটি এর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জায়গা নির্ধারণ করা হলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।

জানা যায়, এই নৌ রুটে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক পারাপার হয়। অথচ মাত্র ৩টি ফেরি চলে এ রুটে। এর মধ্যে একটি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সমস্যায় বন্ধ থাকে। এ ছাড়া নাব্যতা সমস্যায় প্রায়ই ফেরি নদীর মাঝখানে আটকে যায়।

তাই অনেকের দাবি, কমপক্ষে ৫ থেকে ৬টি ফেরি চালু করা দরকার এ রুটে। একই সঙ্গে দ্রুত ড্রেজিং করে ফেরি সচল রাখা উচিত।

পরিবহন শ্রমিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করায় রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুট এলাকার পাশে মাত্র ৫০ মিটার জায়গার মধ্যে ৫টি ঘাট। এর মধ্যে ২টি ফেরিঘাট, একটি ঢাকা লঞ্চঘাট, লক্ষ্মীপুর লঞ্চঘাট ও স্পিডবোট ঘাট।

তিনি জানান, এর মধ্যে ইলিশা ঘাটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচুর চাপ থাকে। এ চাপের প্রভাব পড়ে পাশের মহাসড়কে। সড়কের চার কিলোমিটারে এলাকাজুড়ে জট থাকায় স্থানীয়রা যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরাও পড়ছে দুর্ভোগে।

যাত্রী ফাহিম আহম্মেদ বলেন, ‘ঢাকা ও লক্ষ্মীপুর হয়ে অন্যান্য রুটে চলাচলের জন্য চমৎকার ইলিশা ঘাট। তবে যাত্রীরা এখানে নানা দুর্ভোগে পড়ে। বসার জন্য একটি যাত্রীছাউনি থাকলেও অধিকাংশ সময় তা তালাবদ্ধ থাকে। ঘাটটির উন্নয়ন প্রয়োজন।

বরিশাল থেকে আসা ঢাকাগামী ট্রাকের চালক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘সরকার এই ঘাট থেকে বছরে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। কিন্তু ঘাটের কোনো উন্নয়ন নেই।’

লঞ্চঘাটে সংযোগ সড়ক ও মানসম্পন্ন পন্টুনও দরকার ইলিশা ফেরিঘাটে। ছবি: নিউজবাংলা

ইলিশা লঞ্চ ও ফেরিঘাটের ইজারাদার ইউসুফ পাটোওয়ারী জানান, মেঘনা নদীর ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটের ২৮ কিলোমিটার পথ পার হতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু নদীতে নাব্যতা ও টার্মিনাল না থাকায় এ পথ পাড়ি দিতে আরও বেশি সময় লাগে।

তিনি জানান, ঘাট থেকে প্রতিদিন ঢাকা-লক্ষ্মীপুরগামী ২০টি লঞ্চ, দুটি সি-ট্রাক, তিনটি ফেরি ছাড়াও অসংখ্য স্পিডবোট চলছে।

ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান বলেন, ‘লঞ্চঘাটে সংযোগ সড়ক ও মানসম্পন্ন পন্টুন দরকার। ফেরিঘাটে পার্কিং প্লেস স্থাপন ও সংযোগ সড়ক পাকা করাসহ টয়লেট ও যাত্রী ছাউনি দরকার। লঞ্চ ও ফেরিতে উঠানামায় যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের দুর্ভোগ লাঘবে রুটিন সংস্কার দরকার।’

ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু জানান, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়। ১২ বছরেও নৌমন্ত্রীর কয়েক দফা পরিদর্শনকালে এসব সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাস-ট্রাকচালক, শ্রমিকসহ যাত্রীদের। ঘাটের সমস্যার দ্রুত নিরসন প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজিত হাওলাদার বলেন, ‘ইলিশা ফেরিঘাটে জমি নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে পার্কিং নির্ধারিত হচ্ছে না। দেখেশুনে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর