বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফাগুন হাওয়ায় ভালোবাসা

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:৩৫

পয়লা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে একই দিনে। নাগরিক ব্যস্ততা, যানজট, করোনাভাইরাস মহামারির থাবা, সব যেন তুচ্ছ তারুণ্যের জয়গানে। বাসন্তী রঙা শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুল ছড়াবে ভালোবাসার মৌতাত।

‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপনহারা প্রাণ; আমার বাঁধনছেঁড়া প্রাণ।’ ফাগুনে কবি রবি ঠাকুরের প্রাণও হয়েছিল আপনহারা। বসন্ত হাওয়ায় শুধু প্রাণ নয়, জেগে ওঠে প্রকৃতিও।

আজ পয়লা ফাল্গুন। শুরু হলো বসন্তের দিন। আবহমান বাংলার প্রকৃতি জেগে উঠেছে আড়মোড়া ভেঙে। ফুরালো পাতা ঝরার দিন। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে পত্র-পল্লবে শোভা পাবে মনোরম সবুজ। মৃদু হাওয়ায় ভেসে আসবে কোকিলের কুহুতান। কংক্রিটের শহরে কোকিলের ডাক শোনাটা বিরল হলেও গ্রাম বাংলায় তার অভাব হবে না।

ফাগুনের নীল আকাশে সোনাঝরা আলোর মতো আজ হৃদয়ও আপ্লুত প্রাণভরা ভালোবাসায়। ফাগুন হাওয়ায় কে যেন গুন গুন গেয়ে যায়, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি-- এই সুরে/ কাছে দূরে/ জলে স্থলে বাজায় বাঁশি।’ কারণ বসন্তকে বরণের এই উদ্বেলতায় যোগ হয়েছে ভালোবাসার খুনসুটি। আজ শুধুই ভালোবাসার দিন। ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসও আজ।

নাগরিক ব্যস্ততা, যানজটে দেরি হয়ে যাওয়া, করোনাভাইরাস মহামারির থাবা, যেন সব তুচ্ছ তারুণ্যের জয়গানে। বাসন্তী রঙা শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুল ছড়াবে ভালোবাসার মৌতাত।

প্রেমিকার স্নিগ্ধতায় বিভোর তরুণ রিকশার হুড উঠিয়ে হয়তো সুরে-বেসুরে গাইতে থাকবে, ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে/ আমার নামটি লিখ তোমার মনের মন্দিরে/ আমার পরানে যে গান বাজিছে/ তাহার তালটি শিখ তোমার চরণমঞ্জীরে...।’

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের উৎসবমুখরতা শহুরে গণ্ডি ছাড়িয়েছে আরও আগেই। তার ব্যাপ্তি মফস্বল ছাড়িয়ে গ্রামের কিশোরীকেও করেছে ব্যাকুল। অনলাইন, ই-মেইল আর ফেসবুক চ্যাটিংও হয়ে উঠবে প্রেমকথার কিশলয়। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুটবে ফুল সৌন্দর্যবিভায়।

ভালোবাসা দিবসের গল্পটা অনেক পুরানো। আছে নানা কাহিনী। তবে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের গল্পটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। গল্পটা ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের।

তখন রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছেন তারা। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে পরাজিত করতে সেনাবাহিনীকে আরও বড় করার কথা ভাবলেন তারা।

ওই সময়ে তরুণরা যুদ্ধের দামামার প্রতি অনাগ্রহী। ক্লডিয়াস ভাবলেন, সঙ্গী না থাকলেই যুদ্ধমুখী হবে তারুণ্য। তাই বিয়েকে নিষিদ্ধ করলেন তিনি।

তারুণ্যকে নিয়মের বেড়াজালে বন্দি করার কাজটিও তো মুশকিলের। সম্রাটের চোখ ফাঁকি দিয়ে তরুণদের পাশে দাঁড়ালেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। গোপনে তিনি বিয়ে দিচ্ছিলেন তরুণ-তরুণীদের। কিন্তু সম্রাটের চোখকে বেশি দিন ফাঁকি দিতে পারলেন না। ধরা পড়লেন ভ্যালেন্টাইন। শুরু হলো কারাজীবন। মুক্তির পথ জানা না থাকলেও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে জেলখানায় যেতেন তরুণরা। এমনকি কারাগারের জেলারের অন্ধ মেয়েটাও দেখতে যেতেন তাকে।

চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যে শুরু হলো ভালোবাসা। ধর্মযাজক হয়েও রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রেমে মজেন সাধু ভ্যালেন্টাইন। এমনকি আইন ভেঙে করলেন বিয়েও।

খবরটা গোপন থাকেনি। পৌঁছে যায় সম্রাটের কানে। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন ভ্যালেন্টাইনের। সে তারিখটি ছিল ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তার প্রেয়সীকে চিঠি লেখেন তিনি। চিঠির শেষ বাক্যটা ছিল, ‘তোমার ভ্যালেন্টাইনের কাছ থেকে ভালোবাসা।’

সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন। যদিও দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে দিনটি। অবশেষে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের রাজা পোপ জেলুসিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে ঘোষণা করেন।

সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত জুনো উৎসব। রোমান পুরাণের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনো। দিনটিতে অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত।

৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে, তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে গাঁথা হয় সূত্রে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

করোনাভাইরাস মহামারিকালে অবশ্য এসব আয়োজনের ভাটা নেমেছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। তবুও তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে হয়তো সশরীরে দেখা না হলেও ভালোবাসার বার্তা ঠিক পৌঁছে যাবে আপন ঠিকানায়।

অবশ্য সোমবার সকাল ৮টায় বসন্ত বরণের আয়োজন আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ফাগুন হাওয়া গায়ে মেখেই বসন্তকে বরণ করে নেবে তারুণ্য।

এ বিভাগের আরো খবর