বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১ টাকায় কলম-খাতা, ১০ টাকায় শাড়ি-লুঙ্গি

  •    
  • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:০৯

ফুলবাড়ী উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দাস বলেন, ‘আমি নিজেও তাদের সামাজিক কার্যক্রমগুলো দেখেছি। তারা বিনা মূল্যে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের কলম-খাতা এবং অসহায় মা-বাবাকে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করছে।’

একটি কলম কিনতে কমপক্ষে পাঁচ টাকা লাগে। খাতা কিনতে লাগে তারও বেশি। কিন্তু অভাবী শিক্ষার্থীদের মাত্র ১ টাকায় খাতা-কলম দুই-ই দিচ্ছে কুড়িগ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

শুধু কি তাই? একই সংগঠন অভাবগ্রস্ত নারী-পুরুষকে শাড়ি-লুঙ্গি দিচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়! পাশাপাশি চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে তারা।

প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের নাম ‘ফাইট আনটিল লাইট’ বা সংক্ষেপে ‘ফুল’ যুব সংস্থা।

বিনা মূল্যে জ্বর পরিমাপ, ব্লাড প্রেশার, ওজন পরিমাপ, পালস ও অক্সিজেন পরিমাপ, ডায়াবেটিস পরীক্ষাসহ বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্যসেবা, মানবতার বাজার ও ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করে এই সংগঠন। এ ছাড়াও ১০ টাকায় অসহায় মা-বাবাকে শাড়ি-লুঙ্গি, দুই টাকায় গৃহিণীর ব্লাউজের কাপড়, সাবান, মাস্ক ও ১ টাকায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে খাতা-কলম বিতরণ ও বাস্তবায়ন করছে তারা।

এই সংগঠনের উদ্যোগেই করোনার মধ্যে ২০২০ সালের ১ মে থেকে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলার গর্ভবতী মাসহ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা এবং ২ হাজার রোগীকে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়। জটিল রোগীদের সরকারিভাবে সঠিক চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ ছাড়াও করোনাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন বাড়িতে উঠান বৈঠকের আয়োজন করে তারা।

জেলার দুটি উপজেলার ৫১ জন স্বেচ্ছাসেবীসহ বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এবং ঢাকার নিবন্ধিত তিন ডিএমএফ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হয় সংগঠনটির কাজ।

অরাজনৈতিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনার মহামারিতে এরই মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক, তিন হাজার সাবান, ৫১ জন অসহায় মা-বাবাকে শাড়ি-লুঙ্গি, দেড় শতাধিক গৃহবধূকে ব্লাউজের কাপড়সহ প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এমন এমন কার্যক্রমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও।

তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে ২৭ বছরের মিনুকে নিয়ে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের বিধবা হামিদা বেগমের সংসার। বাড়িতে আর কেউ নেই। হঠাৎ একদিন গভীর রাতে মিনু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সেই স্মৃতি মনে করে হামিদা বলেন, ‘কোথাও কোনো যানবাহন নেই। একলা মানুষ কী করব ভেবে পাইচ্ছি না? এ সময় ‘ফুল’ অফিসের ভাইদের ফোন দেই। ফোন দেয়ার পর রাতেই ডাক্তার আসে বাড়িতে। চিকিৎসা দিয়ে ওষুধের ব্যবস্থাও করেন তারা। কোনো ভিজিট ছাড়াই এমন সেবা পাব চিন্তাও করিনি।’

৫৫ বছরের খবির মণ্ডল বলেন, ‘আমি মেলা রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালেও ভর্তি ছিলাম। পরে ফুল যুব সংস্থার লোকজন আমাকে নিয়মিত ডায়াবেটিস, প্রেসার মাপে। সময়মতো তারা আমার খোঁজখবর রাখে। ওদের সেবাযত্নে আমি এখন সুস্থ, চলতে পারি।’

হরিশ্বর গ্রামের বাসিন্দা গর্ভবতী হাওয়া বেগম বলেন, ‘ফুল থেকে আমার শারীরিক অবস্থা চেকআপ করে ক্যালসিয়াম ও আয়রন বড়ি দেয় বিনা মূল্যে। তাদের জন্যই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় না। বাড়িতে বসে এমন সেবা পেয়ে আমি খুশি।’

রিনা বেগম বলেন, ‘ফুলের কাদের ভাই মাসে মাসে এসে এলাকায় বাঁচ্চাদের এক টাকায় খাতা-কলম এবং অসহায়দের ১০ টাকায় শাড়ি-লুঙ্গি দেন। তাদের এমন নানা কাজ ১৫-১৬ বছর ধরে দেখছি।’

শাহি ইসলাম ইমন বলেন, ‘তিন দিন বয়সে আমার মা মারা যান। এরপর বাবাও চলে যান। বর্তমানে নানির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছি। খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ি। ফুল সংস্থা আমাকে খাতা-কলম দিয়ে সহযোগিতা করে।’

ভলান্টিয়ার ডা. তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘মানুষ হিসেবে নিজ দায়বদ্ধতা থেকে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ফুল যুব সংস্থার ভলান্টিয়াররা। কোনো বিনিময় ছাড়াই আমরা প্রান্তিক মানুষের সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছি।’

ফুল যুব সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘২০০৪ সাল থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিজ উদ্যোগে শুরু করি মানবসেবা। এরপর কাজের পরিধি বাড়াতে ২০১৪ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত হয় ফুল যুব সংস্থা। সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এই সংস্থা।’

ফুলবাড়ী উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দাস ফুল সংস্থার নিবন্ধিত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি নিজেও তাদের সামাজিক কার্যক্রমগুলো দেখেছি। তারা বিনা মূল্যে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের কলম-খাতা এবং অসহায় মা-বাবাকে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর