বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বালুচরে ২৮ ফসলে বানভাসিদের হাসি

  •    
  • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪৭

চরগুলোতে গম, ভুট্টা, চিনাবাদাম, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, মটরশুটি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, ধনিয়া, কালিজিরা, সূর্যমুখী, সরিষা, কলা, আলু, মিষ্টিআলু, তিল, মেথি, মসুর ডালসহ ২৮ রকম ফসল চাষ হয়েছে।

মাস চারেক আগের ঘটনা। কখনও আকস্মিক, কখনও মৌসুমি বন্যা। এই বন্যায় তিস্তার ভাঙনে ভিটেছাড়া হয়েছিল শ শ পরিবার। মাইলের পর মাইল ফসলি জমিতে বালুর স্তূপ পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েন হাজারো মানুষ। ঠিক চার মাস পরই বদলে গেছে তিস্তা পারের চিত্র। কৃষকরা ফলাচ্ছেন ২৮ রকমের ফসল। ভাগ্য বদলের যুদ্ধে নেমেছেন বানভাসিরা।

এ চিত্র উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিস জানিয়েছে, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর জেলায় ১ হাজার ৩৭৬টি চর রয়েছে। চরগুলোতে গম, ভুট্টা, চিনাবাদাম, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, মটরশুটি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, ধনিয়া, কালিজিরা, সূর্যমুখী, সরিষা, কলা, আলু, মিষ্টিআলু, তিল, মেথি, মসুর ডালসহ ২৮ রকম ফসল চাষ হয়েছে।

এসব ফসল চাষ করা চরের জমির পরিমাণ ১ লাখ ৯১ হাজার ৮১৯ হেক্টর।

কৃষি অফিস জানায়, রংপুরের চার উপজেলায় ৬৭টি চরে ৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর, গাইবান্ধার ৬ উপজেলার ১৬০টি চরে ৩১ হাজার ৬৫৮ হেক্টর, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় ৩৬৮টি চরে ৫৪ হাজার ২৯৮ হেক্টর, লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ৫৯টি চরে ৮ হাজার ৫৭১ হেক্টর এবং নীলফামারীর ৩টি উপজেলার ৩৪টি চরে ৩ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে এই ফসল ফলাচ্ছেন চাষিরা।

রংপুরের গংগাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম। বয়স ৫৫ বছর। তিনি তিস্তা ব্রিজের পূর্ব দিকে ৩ একর জমিতে পেঁয়াজ, আলু, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ ও শাকসবজি চাষ করেছেন।

নিউজবাংলাকে নজরুল বলেন, ‘একসময় কী আছিল নে আমার; ঘর-বাড়ি, জমিজমা, সুখ-শান্তি সোউগ আছিল। এ বছর একনা জমি ও বছর একনা, এমন করি কিছু থাকিল নে..., তিস্তা নদী বাড়িঘর জমি সোউগ নিয়ে গেইচে। এ্যালা বালু চরোত কপাল ঘোরাইতোছি। এট্টে চাষ-বাস করি কিছুটা করতে পারছি। এটে আবাদ করতে কম টাকা নাগে। সে জন্যে ভালো কিছুটা লাভ হয়।’

তমছের আলী বলেন, ‘চর এ্যালা আমারগুলো ভাগ্য বদলাইতেছে। চরোত সব আবাদ হয়। খাটনি (কষ্ট) একনা বেশি। যেভাবে বন্যাত ক্ষতি হয়, চরোত এই আবাদ না হইলে ঢাকাত যায়া হয় ভিক্ষে, না হয় রিকশা চলে খাওয়া নাগিল হয়। এ্যালা বাড়িত থাকি কষ্ট হলেও আবাদ করোছি।’

বিনবিনার চরের মমেনা বেগম বলেন, ‘একটা ঘর আছিল, সেই ঘরোত কোনো মতে আচিনো। হটাৎ করি বান (বন্যা) আসি ঘরটাও নিয়ে গেইচে (নদীগর্ভে বিলীন)। সেই থাকি নদীর বান্দের ওপর থাকি। সারা দিন চরোত কাম করি। চরোত যদি আবাদ না হইল হয়, তাইলে কী করি খাইনো হয় তা আল্লায় জানে।’

আমরা তো সব সময় ক্ষতির মুখে থাকি। এই চরে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে তা আমাদের কপাল। ভাগ্যগুণে এসব সোনার ফসল হচ্ছে। আমাদের কাছে ফসল নয়, সোনা।

মমেনা, তমছের, নজরুল ইসলামের মতো আরও অনেকের সঙ্গেই কথা হয় চর এলাকায়। তিস্তার বিস্তৃর্ণ বালুচরে আবাদ হওয়ায় দারুণ খুশি তারা।

কৃষকরা জানান, বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমে। এ কারণে সেখানে সার খুব একটা লাগে না। সব ধরনের আবাদই হচ্ছে। এতে করে বন্যার সময় যে পরিমাণ ক্ষতি হয় বানভাসি চরাঞ্চলের মানুষের, তাদের সে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারছেন এমন আবাদে।

অবশ্য ফসল ঘরে তোলা আর বিক্রি নিয়ে আছে তাদের নানা আভিযোগ।

আজিজুর রহমান ভুট্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো সব সময় ক্ষতির মুখে থাকি। এই চরে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে তা আমাদের কপাল। ভাগ্যগুণে এসব সোনার ফসল হচ্ছে। আমাদের কাছে ফসল নয়, সোনা।’

চরে কৃষকরা যেভাবে ফসল ফলাচ্ছেন তা বিস্ময়, বড় সাফল্য। কৃষি বিভাগের উচিত এই চর এবং চরের আবাদ নিয়ে একটা চিন্তা করা, যেন ফসলগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহজে ও স্বল্প খরচে পাঠানো যায়।

তিনি বলেন, ‘বিপুল পরিমাণে আবাদ হচ্ছে চরে, এগুলো আনতে হয় কখনো ঘোড়ার গাড়ি ও কখনো মহিষের গাড়িতে করে। সেগুলো আবার হাটবাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয়। আমরা চাই, চরেই যদি পাইকারকের কেনার ব্যবস্থা করত প্রশাসন, তাহলে চরের মানুষ একটু লাভবান হতো।’

কৃষক সংগ্রম পরিষদের আহ্বায়ক ও কৃষক নেতা পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘চরে কৃষকরা যেভাবে ফসল ফলাচ্ছেন তা বিস্ময়, বড় সাফল্য। কৃষি বিভাগের উচিত এই চর ও চরের আবাদ নিয়ে একটা চিন্তা করা, যেন ফসলগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহজে ও স্বল্প খরচে পাঠানো যায়।’

এ নিয়ে তারা অনেকবার দাবি জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবার রহমান বলেন, ‘কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করছি আমরা। তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। বীজ দেয়া হচ্ছে। যখন যে সমস্যা সেটা আমরা ফেইস করছি।’

তিনি বলেন, ‘টেকসই আবাদের জন্য বিভিন্ন আবাদের প্রদর্শনী করছি। কৃষকের যখনই যে আবাদ প্রয়োজন, তার বিষয়ে আগ্রহ তৈরি ও সব সময় সহযোগিতা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর