বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের এক-তৃতীয়াংশের ব্লাড ক্যানসার

  •    
  • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:২৪

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য বলছে, শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হারও বেড়ে চলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হলে এই মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

দেশে বর্তমানে ২০ লাখের বেশি ক্যানসার রোগী রয়েছে, যাদের ৫ শতাংশই শিশু। এসব শিশুর ৩০ শতাংশ আবার ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই শিশুদের এই মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় একই।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এমন ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। তথ্য বলছে, শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হারও বেড়ে চলেছে। প্রাথমিকপর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হলে এই মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনবল সংকটের কারণে আলাদা করে পরিসংখ্যান হয় না। এই হাসপাতালে সেবা নেয়া রোগীদের পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের বেশির ভাগ ক্যানসারই জন্মগত। এ ছাড়া ভেজাল খাদ্য, খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার, বায়ুদূষণ ও বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।

জিনগতভাবে শিশুরা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দেশে ক্যানসার আক্রান্তদের বড় একটি অংশ শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আবার শনাক্তদেরও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী ভুল ধারণা, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে অর্ধেক চিকিৎসা পর্যায়েই হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছে।

চিকিৎসায় ক্যানসার ভালো হয় জানিয়ে শিশু রোগ ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিশুদের ক্যানসার বড়দের ক্যানসারের মতো না, সম্পূর্ণ আলাদা। বড়দের জরায়ু, স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার বেশি হলেও শিশুদের বেশি হয় ব্লাড ক্যানসার। ক্যানসারে আক্রান্ত ১০০ শিশুর মধ্যে ৩০টির ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শিশু ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। বাকি ৭০ শিশুর মধ্যে ১৫টি ব্রেন টিউমার এবং ১৫টি গ্রন্থির ক্যানসারে আক্রান্ত। আর ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে চোখ, কিডনি, হাড়, মাংসপেশি, জনন কোষ ও লিভারে ক্যানসার হতে পারে।

‘এসব ক্যানসারের বেশির ভাগই প্রাথমিকপর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে অনেক অভিভাবকের মধ্যে ভুল ধারণা থাকায় ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা না নিয়ে সন্তান নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান। এমনকি ৩০ শতাংশ আক্রান্ত ব্লাড ক্যানসারের রোগীও ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে চোখের ক্যানসার ভালো হয় না।’

কুমিল্লা থেকে ১৮ বছর বয়সী ক্যানসার আক্রান্ত ছেলে আল-আমীনকে ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন মামা লতিফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাগ্নের জ্বর থাকছে। কুমিল্লায় অনেক চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। কোনো সমাধান মেলেনি। অবশেষে গত মাসে এক চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাই। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান যে আল-আমীন ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। গতকাল ওকে ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি করেছি।’

আমীনা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। সে এক বছর ধরে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। ৬ মাস ধরে ক্যানসার হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে চারটি কেমোথেরাপি দেয়া সম্ভব হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, আরও দুই বছর চিকিৎসা দিতে হবে।

আমীনা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। চিকিৎসায় অনেক খরচ। ক্যানসার চিকিৎসায় যেসব ওষুধ দেয়া হয় সেগুলো খুবই ব্যয়বহুল। অনেক ওষুধই বাজারে সহজলভ্য নয়। এত টাকা কিভাবে জোগাড় করব, ভেবে পাচ্ছি না।’

দেশে মৃত্যুপথযাত্রী ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের কষ্ট বা বেদনা প্রশমনে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ চালু করেছে বিএসএমএমইউ। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে খুবই সীমিত পরিসরে এই সেবা দেয়া হলেও শিশুদের এই সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শিশু ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসাসেবা শুরু করে ২০১৪ সালে। প্রতিষ্ঠানকাল থেকে এই বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন শিশু রোগ ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। আর তা ব্যয়বহুল। আমার পরামর্শ, প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা নিতে হবে। শনাক্তের পর ভালোভাবে চিকিৎসা নিলে ক্যানসার রোগী সুস্থ হওয়া সম্ভব।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রোগীভেদে শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার খরচও হয় ভিন্ন ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে ওজন একটি বড় বিবেচ্য বিষয়। ১০ কেজি ওজনের একটি শিশুর রক্ত পরীক্ষা, কেমোথেরাপি, ওষুধ খরচ ইত্যাদি করতে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা লেগে যায়। যাতায়াত, অভিভাবকদের থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েই এ অর্থ ব্যয় করতে হয়। আগে আরো বেশি ব্যয় হতো।

চিকিৎসা পদ্ধতি

ডা. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ক্যানসার চিকিৎসা তিন ধাপে করা হয় সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। কাকে কোন চিকিৎসা দেয়া হবে তা নির্ভর করে রোগীর অবস্থার ওপর। শুধু কেমোথেরাপিতেও এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ক্যানসার ভালো হয়ে যায়।

পাশাপাশি কিছু ওষুধ লাগে, যেগুলো দেশেই পাওয়া যায়। শুধু ব্লাড ক্যানসার নিরাময়ে চার বছর লাগে। বাকিগুলো ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ভালো হয়।

শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা শুধু ঢাকায়

ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেশের কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেয়া হয়। তবে সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এখানেও চিকিৎসক, শয্যা, যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের অভাব রয়েছে।

ঢাকায় জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক অনকোলজি বিভাগসহ হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসা দেয়া হয়। দেশে শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ৩৫ জন। তাদের মধ্যে ১৫ জনই বসেন ক্যানসার হাসপাতালে। বাকি ২০ জন দেশের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত।

এ বিভাগের আরো খবর